ঈদে মেট্রোরেল ভ্রমণের সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভ নিয়ে ফিরলেন অনেকে
মেট্রোরেল স্টেশনের বন্ধ ফটক। এর সামনে শত শত মানুষের ভিড়। সেই ভিড়েই দিকেই যেতে বাবা সোহাগ আলীর হাত ধরে টানছিল ছেলে তামজিদ। ট্রেনে না চড়ে কোনোভাবেই বাড়ি ফিরে যেতে চাইছিল না সে।
সোহাগ তাঁর ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছিলেন, ‘বাবা, আজকে ট্রেন আর চলবে না। দেখছ না গেট বন্ধ করে দিয়েছে। আপু-ভাইয়ারাও (অন্য শিশু-কিশোর) চলে যাচ্ছে। আমরা কালকে আবার আসব, তখন ট্রেনে চড়ব, ঠিক আছে?’
কিন্তু এসবের কিছুই মানতে নারাজ ছোট তামজিদ। ছেলের হাত ধরে টানাটানি সামলাতে একপর্যায়ে তামজিদকে কোলে তুলে নিলেন সোহাগ আলী।
ঘটনাটি আজ রোববার বেলা পৌনে দুইটার দিকের। মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনের সামনে এমন চিত্র দেখা গেছে। সোহাগ আলীর মতো স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণে গিয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন।
উত্তর বাড্ডা থেকে পরিবার নিয়ে আসা সোহাগ আলী বলেন, পৌনে একটার দিকে স্টেশনে এসে আগারগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ের কাছাকাছি গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ পান। এরপর লাইন একটু একটু করে এগিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট পর আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত আসেন। এরপরই স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঈদের পরদিন আজ সোহাগ আলীর মতো চার শতাধিক মানুষকে আগারগাঁও স্টেশনে মেট্রোরেল ভ্রমণে গিয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে। ফিরে যাওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য, তাঁদের কেউ কেউ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্টেশনে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মেট্রোরেলে চড়তে না পেরে অনেকটা হতাশা নিয়েই তাঁদের ফিরে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের বিষয়টি বোঝানো যাচ্ছে না।
বেলা একটার দিকে আগারগাঁও স্টেশন প্লাজার সামনে মেট্রোরেল ভ্রমণে আগ্রহী ব্যক্তিদের দীর্ঘ সারি ছিল। লাইনটি স্টেশনের ফটকের সামনে থেকে আগারগাঁও মোড় হয়ে পাসপোর্ট কার্যালয়ের কাছ পর্যন্ত ছিল। ফটক দিয়ে তখনো কিছু কিছু মানুষকে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল। বেলা দেড়টার দিকে মেট্রোরেলের স্টেশনে ঢোকার গেটটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ সময় ভেতরের দিকে থাকা আনসার সদস্য ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের বলছিলেন, প্ল্যাটফর্মের ভেতরে যাঁরা আছেন, শুধু তাঁরাই নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে উঠতে পারবেন। কারণ, বেলা দুইটা পর্যন্ত তখন আর মাত্র দুটি ট্রেন আসার কথা। এই ট্রেনগুলোতে প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীদের জায়গা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই আর কাউকে স্টেশনের ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এমন ঘোষণা শুনে অনেকে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মেট্রোরেলের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ গালমন্দ করছিলেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ ট্রেনে আর কেউ ওঠার সুযোগ পাবে না, এটা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আগেই বলে দিতে পারত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। মেট্রোরেলের কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতার অভাবকে এ জন্য দায়ী করেন তাঁরা।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সানাউল শিকদার বলেন, ‘মেট্রোরেল ভ্রমণে সবাই আসে ভালো অভিজ্ঞতা নিতে। কিন্তু আজকে সবাইকে খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। ঈদের ছুটির দিনে মেট্রোরেল চলাচলের সময় আরেকটু বাড়াতে পারত। সন্তানদের নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকলাম, এখন বলছে ফিরে যেতে, আজকে আর হবে না।’ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছেছিলেন বলে জানান।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে স্ত্রী, ছেলে, শাশুড়ি, শ্যালিকাকে নিয়ে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে গিয়েছিলেন নুর আলম। দুপুর ১২টায় তিনি সেখানে পৌঁছান। বেলা দেড়টার দিকে লাইনে তিনি শতাধিক মানুষের পেছনে ছিলেন। পরে বন্ধ ফটকের সামনে জটলা দেখে লাইন ছেড়ে সামনে চলে আসেন।
নুর আলম বলেন, ‘এতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি ট্রেনে চড়তে পারব না, এমন কিছুই কেউ বলল না। এখন বলছে আমরা আজকে আর ট্রেনে চড়ার সুযোগ পাব না। তারা অন্তত আগেই ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারত। তাহলে এত দূর থেকে এসে এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো না।’
সূত্রঃ প্রথম আলো
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন