দেশসেবায় করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৃহৎ কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের ওপর ন্যস্ত হতে যাচ্ছে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে আপনাদের জীবনের একমাত্র ব্রত।’
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে ৭৩তম বিএমএ লং কোর্স ও ৪৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ক্যাডেটদের কমিশন প্রদান উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট প্যারেডে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির জন্য এক গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি দেশ ও জনগণের জন্য আপনারা নিঃস্বার্থ ও আন্তরিকভাবে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
স্মার্ট, কর্মদক্ষ ও আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত সাত বছরে আমাদের সরকার সেনাবাহিনীকে একটি গতিশীল, চৌকস এবং যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে আমরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের বুকে আরো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরা।’
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিশীল দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আমাদের সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আমাদের জাতীয় উন্নয়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার কাজেও সশন্ত্র বাহিনীর তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের ত্যাগ ও সাহসী ভূমিকার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ শান্তি বিরাজ করছে এবং সেখানে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের আগে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সমৃদ্ধ উন্নত দেশে উন্নীত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জ্যেষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক ও নতুন কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাটেডদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক, বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এম শফিকুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সুসজ্জিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও দৃষ্টিনন্দন মার্চপাস্টের অভিনন্দন গ্রহণ করেন। একাডেমিতে কৃতিত্বের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ ক্যাডেটদের পদক প্রদান করেন।
চলতি বছর শ্রীলঙ্কার একজন ও নেপালের একজনসহ মোট ১৯৪ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। এর মধ্যে আটজন নারীসহ ১৮৯ জন ক্যাডেট ৭৩তম বিএমএ লং কোর্স এবং পাঁচজন হচ্ছেন বিএমএ স্পেশাল কোর্সের। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. আহসান উল্লাহ সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সোর্ড অব অনার এবং কম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. রুহানী রাব্বি হামজা সামরিক বিষয়ে পারদর্শিতার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন।
ড্রাম, বাদ্যযন্ত্রের উদ্দীপক ধ্বনি এবং দেশাত্মবোধক সংগীতের সুরে মুগ্ধ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঘণ্টাব্যাপী এ কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা অ্যাটাসে, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ক্যাডেটদের অভিভাবকরা আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। সূত্র : বাসস
শেয়ার করুন