শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন
সাড়ে পাঁচ বছর পর ২৭৪ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার
আট মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল
সাড়ে পাঁচ বছর অপেক্ষার পর চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে আরও ২৭৪ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। তাদের মধ্যে ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৭ উপজেলার ২২২ জন আবেদনকারী রয়েছেন। পাশাপাশি বাতিল করা হচ্ছে আট মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এ ছাড়া পৃথক আবেদনে গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে এবং বিভিন্ন বাহিনীর বাতিল হওয়া ৫১ জনকে বেসামরিক শাখায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮৪তম সভায় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিগগির এ বিষয়ে পৃথক গেজেট প্রকাশ করা হবে। ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও সরাসরি আবেদন করেছিলেন প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম দফায় তাদের মধ্য থেকে ১ হাজার ৩৫০ জনকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জামুকার এ-সংক্রান্ত কার্যপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর আলোকে ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সমন্বিত তালিকায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশ হয়েছে। উপজেলা থেকে আবেদন যাচাইয়ের পর যে তালিকা এসেছে, সে তালিকার চূড়ান্ত বাছাই দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কাজ শেষ হবে।
জামুকা সভার কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে চূড়ান্ত যাচাইয়ের পর ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৭টি উপজেলার ৪৮৩ জনকে ‘ক’ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। পরে বিভাগীয় কমিটির সুপারিশপ্রাপ্তদের নথি পর্যালোচনার পর নতুন করে স্বীকৃতির ওই সিদ্ধান্ত এসেছে।
বিভাগীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ঢাকা ৫৭, চট্টগ্রাম ১১৮ ও রংপুরের ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনেকে ইতোমধ্যে মারা গেছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গেজেটভুক্ত হওয়ার পর তারাও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তাদের অবর্তমানে পরিবারের সদস্যরা ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবেন। জামুকার একই সভায় আট মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন– ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চন বিষ্ণুপুর বাজারকান্দি গ্রামের ডা. মহিউদ্দিন মিয়া, শ্যামপুরের আব্দুল জলিল হাওলাদার, নুরুদ্দিন সরদারের কান্দির হারুন অর রশিদ, লাখারকান্দির ইউনুস আলী মোল্লা, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার উলোকান্দা গ্রামের সাইদুর রহমান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা গ্রামের কাজী শরিফুল আলম, রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা গ্রামের এস এম আব্দুল বারী ও বেতুয়া গ্রামের শফি উদ্দিন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪টি এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন জমা নেওয়া হয়। পাশাপাশি উপজেলা বা জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি এমন আবেদন পাওয়া যায় ৫ হাজার ৫৫৩টি। ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের ৪৭০টি উপজেলা, জেলা ও মহানগরে কমিটি গঠন করে আবেদনকারী ব্যক্তিদের যাচাই শুরু করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৩। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ৬ হাজার ৩৯৯ জন। মুক্তিযোদ্ধা, ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪। মুক্তিযোদ্ধারা মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১২ ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও শহীদ ১১ হাজার ৯৯৮ জন সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পেয়ে আসছেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন