আপডেট :

        ধর্ষকের শাস্তি সবার সামনে হোক: সোহম

        বায়ার্নের দাপটে বিদায় ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গো, পিএসজির মুখোমুখি কোয়ার্টারে

        ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনা: কে দায়ী?

        ইরানের কঠোর হুঁশিয়ারি: ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি

        এশিয়া কাপের সম্ভাব্য সূচি জুলাইয়ে প্রকাশিত হবে

        সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ: জুলাই সনদ প্রকাশ করবে এনসিপি - নাহিদ ইসলাম

        রথযাত্রার উৎসবে বিপর্যয়: উড়িষ্যায় ভিড়ে পিষ্ট হয়ে ৩ মৃত, ১০ জন আহত

        মনু মিয়ার শেষ বিদায়ে অভিনেতা খায়রুল বাসারের মানবিকতার জয়

        মেসি-রোনালদো: সময় পেরিয়েও অপ্রতিরোধ্য ফুটবলের দুই কিংবদন্তি

        মুরাদনগরের অশান্তির জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতারা দায়ী: আসিফ মাহমুদ

        ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে পাকিস্তানে দুইবার কাঁপল ধরিত্রী

        হিরো আলমের যত্নে রিয়া মনি, প্রকাশ করলেন তার শারীরিক অবস্থা

        হাছিনা নয় শেখ হাসিনা নয়, তবুও বারবার বদলাচ্ছে স্কুলের নাম

        জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি টাকা

        কোকেন উৎপাদনে ঐতিহাসিক উচ্চতা, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উদ্বেগ

        ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক জোরদারে প্রস্তুত পুতিন, নতুন যোগাযোগের আভাস

        স্বর্ণের বাজারে ধস: এক মাসে সর্বনিম্ন দামে পৌঁছাল হলুদ ধাতু

        সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, ৩০০ গাড়ি অপেক্ষায়

        ট্রাম্পের দাবি: খামেনির প্রাণ বাঁচিয়েছি, ধন্যবাদ পাইনি

        এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা: কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে নতুন নিয়ম

বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসের নেশায় মত্ত

বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসের নেশায় মত্ত

দেশের রাজনীতিতে এখন নির্বাচনী আবহ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৯টি। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধা দিতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াত। এবারও সেই ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মতোই টানা হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা এবং চলন্ত বাস-ট্রেনে অগ্নিসংযোগের দিকে ঝুঁকছে তারা।

 

২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত প্রায় ৪১৯ টি পৃথক ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ হত্যা করে ৪৯২ জন নিরপরাধ মানুষকে। এ সব অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে আহত হয় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন সময়ে বিএনপি-জামায়াত দেখায় তাদের ভয়ংকরতম রূপ। আগুন দেওয়া হয় সারাদেশের প্রায় ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে, শত শত যানবাহনে, রাস্তার পার্শ্ববর্তী বৃক্ষরাজিতে, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়েও। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারে বহু নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে। মানুষের আহাজারিতে প্রকম্পিত হয়েছিল সারাদেশের হাসপাতালগুলো। প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন মানুষকে।
এক বছর পর ২০১৫ সালের আবারও মাথা-চাড়া দিয়ে উঠেছিল আগুন সন্ত্রাস। সে সময় ২ হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, ৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ, ৭টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে বিএনপি-জামায়াত। এসব ঘটনায় প্রাণ হারান ২৩১ জন। গুরুতর আহত হন ১ হাজার ২০০ জন। সেই অগ্নিসন্ত্রাসের বিভীষিকার কথা ভোলেনি দেশের জনগণ।

সেই সময়ে টেলিভিশনে দেখা একটি দৃশ্য আজও চোখে ভেসে উঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন বার্ন ইউনিটে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার চিকিৎসাধীনদের দেখতে। তার হাত ধরে কাঁদছিলেন এক নারী, নাম গীতা সরকার। কাঁদতে কাঁদতে গীতা যে কথাগুলো বলছিলেন, সেগুলো মনে গেঁথে আছে। তিনি বলছিলেন, ‘ওরা যে বোমাগুলো মারে বা যারাই মারে, ওদের শনাক্ত করুন এবং যারা অর্ডার দেয়, তাদের পরিবারের লোককে ধরে ধরে আপনারা আগুনে পুড়িয়ে দেন। ওরা অর্ডার দিতে পারে, আমাদের তো রক্ষা করতে পারে না। আমাদের জন্য আপনারা সরকার। আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আমাদের রক্ষা করেন’। গীতা সরকারের সেদিনের সেই আকুতি কি দেশের ১৭ কোটি মানুষের আকুতি ছিল না?


আজ পর্যন্ত সেই অগ্নিসন্ত্রাসের কার্যক্রম চলছে। গত ১৩ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ উপেক্ষা করে নিজের গন্তব্যে যেতে ট্রেনে উঠেছিলেন সাধারণ যাত্রীরা। কিন্তু পথে অবরোধকারীরা গাজীপুরের ভাওয়ালে রেললাইন কেটে ফেলায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগিসহ উল্টে পড়েছিল। এতে একজন নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হন। ১৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ট্রেনে আগুন দেওয়া হলে মা ও শিশু সন্তানসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ৭২টি ক্লিপ খুলে ফেলে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রতিদিনই হরতাল-অবরোধের নামে চলছে বাস-ট্রেনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা। বিগত ২৮ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ৬৫০টিরও বেশি গণপরিবহনে অগিসংযোগের মাধ্যমে পুলিশ ও ঘুমন্ত শ্রমিককে হত্যা করেছে। আন্দোলনের নামে এসব কি ঘটছে এই স্বাধীন দেশে?

বিগত ২০১৩-১৪ সালে আন্দোলনের পর ব্যবসায়ী সংগঠনের করা এক জরিপে বলা হয়েছিল, একদিনের হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু পোশাক খাতে ক্ষতি ৩৬০ কোটি টাকা। সরকারি রাজস্ব খাতে ১ দিনের ক্ষতি ২৫০ কোটি টাকা। শিক্ষা খাতে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা। পাইকারি মার্কেট, শপিংমল ও অন্যান্য শপে ১ দিনের হরতাল-অবরোধে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকা। আর্থিক ও ভ্রমণ খাতে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা। যাতায়াত খাতে ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা। উৎপাদন খাতে ১০০ কোটি ও আর অন্যান্য খাতে ১ দিনের ক্ষতি ৬৫ কোটি টাকা। বর্তমানে অর্থনীতির আকার ৪ গুণ বেড়েছে। ফলে এ সময়ের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে ক্ষতিও সেই হারেই বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হরতাল-অবরোধে বহুমুখী ক্ষতি হচ্ছে। ১ দিনের অবরোধ-হরতালে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

এ ক্ষতির দায়ভার কি বিএনপি-জামায়াত নেবে? রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই আছে। কিন্তু মানুষের জান-মাল কেড়ে নেওয়ার অধিকার তাদের কে দিয়েছে?

এদেশে অতীতেও তো রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে। মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার মতো অগ্নিসন্ত্রাসের কর্মসূচি তো আগে দেখা যায়নি। যুগ পরিবর্তনের হাওয়া কেন রাজনীতিতে লাগবে না? রাজনীতি কেন এত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেবে? এতে লোকসানটা কার? দেশেরই তো।

রাজনৈতিক অপশক্তি কি সামাজিকভাবেও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে? দেখা দিচ্ছে “সোশ্যাল ট্রমা”। এ দায়ভার কি বিএনপি-জামায়াতের না? রাজনীতি তো জনগণকে নিয়ে। এখন জনগণ কাদের কথায় আস্থা রাখবে। বিএনপি-জামায়াত জনসম্পৃক্ত আন্দোলনের কথা বলেছে। নিন্দুকরা প্রশ্ন করতে পারেন, এত দিন বিএনপি-জামায়াত যে আন্দোলন করেছে, সেগুলো কি জনসম্পৃক্ত ছিল? জনগণের আস্থা অর্জন না করলে আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা যাবে না।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে যা হয়েছে, তাতে মানুষের মনে যে ‘আন্দোলন-ভীতি’ তৈরি হয়েছে, যাকে বলা যেতে পারে ‘সোশ্যাল ট্রমা’, সেটি দূর করতে না পারলে বিএনপির ‘আন্দোলন’ শুধু বিএনপিরই থাকবে। এতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করাটাই একটি রাজনৈতিক দলের বড় কথা। এই আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের সক্ষমতা কি বিএনপি-জামায়াতের আছে?

গনমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চার-পাঁচজনের ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আর একেকটি বাস পোড়ানোর জন্য প্রতিটি দলকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে দলের হাইকমান্ড। অগ্নিসংযোগকারী বিএনপির কর্মীরা জনপ্রতি পাচ্ছে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর বাসে আগুন দিয়ে ভিডিও করে শীর্ষ নেতাদের পাঠালেই মিলছে এই টাকা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতা দখলের লোভে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাসের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে দেশবাসীর ক্ষতি সাধন করছে। অন্যদিকে এ অর্থ যদি জনগণের উপকারে বা ভালো কোনো কাজে ব্যয় করতো তাহলে কিছু জনসমর্থন হয়তো জনগণ তাদের দিত।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে প্রতিনিয়ত নির্মমতার যে চিত্র বর্তমানে ফুটে উঠেছে, তা একাত্তরের বর্বরতাকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। মানবতাবিরোধী এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বহু মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। নিরীহ গবাদিপশু, গাছ-পালা, রাস্তা-ঘাট, যানবাহন কোনো কিছুই এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। অসংখ্য মানুষ এখনও অগ্নিসন্ত্রাসের ক্ষত বহন করে চলছে। পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যকে হারিয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অনেক নিষ্পাপ শিশু এতিম হচ্ছে।

ধারণা করা যায়, রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ বিএনপি-জামায়াত দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নস্যাৎ করার জন্য ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল, স্মার্ট, টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, টেকসই উন্নয়ন, রূপকল্প-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০, ইত্যাদি ইতিবাচক শব্দগুলো বাংলার অভিধানে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে গণপ্রত্যাখিত বিএনপি-জামায়াত চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে বাংলার মানুষকে প্রতিনিয়ত পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ নামক শব্দের।

যত বাঁধাই আসুক, উন্নয়নের এই জয়যাত্রা থেমে যাওয়ার নয়। এদেশের সাধারণ মানুষ এখন এগিয়ে যাওয়ার পথে, তারা শুধু স্বপ্ন দেখে উন্নত এক ভবিষ্যতের। এই পথে দেশের জনগণ কখনো মেনে নেয়নি এবং মেনে নেবেও না এই মানবাধিকার বিরোধী ও বর্বর অগ্নিসন্ত্রাসীদের।

লেখক: প্রক্টর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত