দেশব্যাপী শুরু এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
আজ থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এতে অংশ নেবে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। ৩ হাজার ৭০০ স্কুলকে কেন্দ্র বানিয়ে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। যেসব স্কুল-কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে তার বেশির ভাগই গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই ছুটি দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলো মার্চ মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ ১ মাস বন্ধ সব শ্রেণির পাঠদান বন্ধ থাকবে।
এ তো গেল এসএসসি। এইচএসসির সময় প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। যেসব কেন্দ্রে এসএসসি ও এইচএসসি দুটো পরীক্ষাই হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেক কেন্দ্রে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কারণে বন্ধ থাকে অন্তত ১০ দিন। ছুটিতে ছুটিতেই কেটে যায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।
আবার পাঠদানের সময় কম পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তেমন কোনো উদ্যোগও নেই। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে এবারও রয়েছে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। এ কারণে বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার পুরো সময় জুড়ে স্কুল ছুটি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন তালুকদার বলেন, এভাবেই ছুটি দিয়ে আসছেন সবাই।
মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বলেন, পরীক্ষার সময় যাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ কারণে পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল সাতটা থেকে তিনটি ক্লাস এবং পরীক্ষা শেষে দুইটা থেকে তিনটা ক্লাস নেওয়া হবে। এতে প্রতি বেঞ্চে লাগানো পরীক্ষার রোল নম্বর সংবলিত কাগজ ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে—এ বিষয় তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকি। তবে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোনা।
সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া শিক্ষাবর্ষের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৭১ দিন নানা ছুটিতে পাঠদান বন্ধ থাকে। এছাড়া শিক্ষা বর্ষের শুরুতেই বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় পাঠদান বন্ধ থাকে। পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা সারা দেশের কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি বছর পরীক্ষা চলাকালীন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ দিন বন্ধ থাকে। এ সময়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ঐ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সারা বছরের শিক্ষাসূচি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ে।
আগে প্রতি বছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির মতো বড় তিনটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। এই তিন পরীক্ষার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকত। বর্তমানে জেএসসি আর হচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে বিবেচনায় ২০১৭ সালে ডিসি সম্মেলনে প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা পরীক্ষাকেন্দ্র করার সুপারিশ করেছিল জেলা প্রশাসকরা। এই প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে পরের বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মহিউদ্দিন খানের সভাপতিত্ব মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি সভা হয়।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্বতন্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্পে সম্ভাব্যতা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামো, কতগুলো কেন্দ্রে ও ভেন্যুতে পরীক্ষা নেওয়া হয় এসব বিষয় পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোথাও কোথাও পরীক্ষার কেন্দ্র নিয়ে এক প্রকার বাণিজ্যও হয়। একটি কেন্দ্রে যেসব স্কুলের পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেখানে স্কুলের সঙ্গে কেন্দ্রের পরিদর্শকদের, কেন্দ্রসচিবের সঙ্গে গোপন সমঝোতা হয়। পরীক্ষার হলে পরিদর্শকরা শিক্ষার্থীদের উত্তর বলে দিতে সহায়তা করে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করে তাদের শিক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়। উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হলে এ অনৈতিক সুবিধা কমবে। চাপ অনেকাংশে কমে যাবে বোর্ডগুলোর। পরীক্ষায় একটি স্বচ্ছতা চলে আসবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন