আমেরিকায় বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের চাহিদা আরো কমবে
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক থেকে ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিচেছ মার্কিন ক্রেতারা। আর এই স্থান দখল করছে চীনের তৈরি পোশাক। একই সাথে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আসছে। ফলে আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মার্র্কিনী অনেক ক্রেতা হারাবে। এদিকে বাংলাদেশের পর পর কয়েকটি গার্মেন্টস এর দুর্ঘটনার পরেও মার্কিন ক্রেতারা এদেশের পোশাক কেনার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা থেকেও তারা ক্রমেই সরে আসছে।সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনে চীন থেকে। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অবস্থান পঞ্চম। এ অবস্থান আরো নিচে নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ)। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়ে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ কমে আসার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।চলতি সপ্তাহে ‘২০১৬ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএসএফআইএ, যেখানে ক্রেতাদের অনাগ্রহের বিষয়টি উঠে আসে। ইউএসএফআইএর সহযোগিতায় এ পর্যালোচনা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ড. শেং লু।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ছাড়া মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছে জনপ্রিয় দুই উৎস দেশ হলো ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। এ দুই উৎস থেকে ক্রয় প্রবৃদ্ধি আগামী দুই বছরও অব্যাহত থাকবে। তবে এর গতি হবে অনেক শ্লথ।সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে তাজরীনে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের মতো বড় দুই শিল্প দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সুনাম, যার ফলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকারের এ সিদ্ধান্তে প্রভাবিত না হয়ে দেশটির ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তখন জানিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় অব্যাহত রাখবে তারা।কিন্তু ইউএসএফআইএর পর্যালোচনা বলছে, এখন সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করেছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ পর্যালোচনা জরিপে অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের মাত্র ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় বাড়াবেন তারা। অন্যদিকে ৬০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা ভিয়েতনাম থেকে ক্রয় বাড়াবেন। অথচ ২০১৪ ও ২০১৫ সালের পর্যালোচনা জরিপে যথাক্রমে ৬৫ ও ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়ানোর কথা বলেছিলেন।প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধিতে সম্ভাবনাময় পাঁচ শীর্ষ দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। জনপ্রিয়তা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ নিয়ে প্রবল উৎসাহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আর চীনের বিকল্প গন্তব্য হিসেবে অবস্থান সুসংসহত করতে বাংলাদেশকে আরো প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে।এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এ চুক্তির আওতায় থাকা ভিয়েতনামের কাছ থেকে ক্রয় বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছেন মার্কিন ক্রেতারা। বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়ানোর উৎসাহে ঘাটতির আরেকটি কারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক মন্দা। মার্কিন ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাদের কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা ও মূল্য সক্ষমতার দিকে আরো মনোযোগ দিতে হবে বলে আমি মনে করি।
শেয়ার করুন