সতর্ক না হলে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে করোনার চতুর্থ ঢেউ: সিডিসি
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা যদি সঠিকভাবে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, তবে দেশজুড়ে সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) প্রধান ড. রোচেলে ওয়ালেনেস্কি।
সোমবার (২৯ মার্চ) হোয়াইট হাউজকে দেওয়া এক করোনা ব্রিফিং এ রোচেলে ওয়ালেনেস্কি বলেন, ‘বেশিরভাগ মার্কিনী ধরে নিয়েছে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের জয় হয়ে গেছে। তবে বিষয়টি মোটেও এমন নয়। বাসিন্দারা যদি সঠিকভাবে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন ও মাস্ক ব্যবহার না করেন,তবে এবার সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ দেখা দিতে পারে’।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত আরেকটি বিস্ফোরণ অপেক্ষা করে রয়েছে, আমি খুবই ভীত ও উদ্বিগ্ন’।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে করোনা সংক্রমণের হার আবারো বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিসি প্রধান। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের থেকে এর আগের সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে’।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই আক্রান্তের লাগাম যদি এখনি টেনে না ধরা যায়, তবে খুব শীঘ্রই ইউরোপের দেশগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রেও সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন সিডিসি প্রধান।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সম্প্রতি সিডিসি প্রধানের সাথে সুর মিলিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে ও পাবলিক হেলথ প্রণীত করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন।
পাশাপাশি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দাদের টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্ত টিকা দেশটির কাছে থাকবে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন। একই সাথে সকল বাসিন্দারা যেনো স্বাচ্ছন্দ্যে ও সহজে টিকা নিতে পারেন, সেজন্য তাদের বসবাসের স্থান থেকে পাঁচ মাইলের মধ্যে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
জো বাইডেন বলেন, ‘সিংহভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দাদের টিকা পেতে মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী এপ্রিলের ১৯ তারিখের মধ্যেই ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনী টিকা পেয়ে যাবেন’।
এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে সকল প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দারা করোনার টিকা নিতে পারবেন। তবে টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হওয়ায় এবং টিকার উৎপাদন বাড়ায় কাঙ্ক্ষিত সময়ের থেকে আগেই বাসিন্দারা টিকা পেতে যাচ্ছেন।
জো বাইডেন আরো জানান, যেসব ফার্মেসি টিকাদান কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে, সেগুলোর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ১৭ হাজার ফার্মেসি রাষ্ট্রীয় টিকাদান কর্মসূচির সাথে যুক্ত রয়েছে, সেই সংখ্যা ৪০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে।
তিনি যোগ করেন, চলতি সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩ মিলিয়ন ডোজ টিকা বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রতে বিতরণ ও প্রয়োগ করা হবে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টিকাই নতুন যারা আবেদন করেছেন, তাদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
তবে টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হলেও এখনই করোনার বিরুদ্ধে নিজেদের জয়ী ভাবতে নারাজ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে জয় পাওয়া থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে রয়েছি’। একই সাথে রাজ্যের গভর্নর, মেয়র এবং স্থানীয় নেতৃস্থানীয়দের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘দয়া করে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এটিকে রাজনীতির অংশ করবেন না’।
ইতোমধ্যে বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে পাবলিক হেলথ প্রণীত করোনার স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘আমরা এতোদিন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আমাদের আরো যুদ্ধ বাকি রয়েছে। এখন আমাদের আরো শক্তভাবে লড়তে হবে’।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন