তৃতীয় সপ্তাহের মতো বেড়েছে করোনার সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রে টানা তিন সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণের সংখ্যা উর্ধ্বমুখী রয়েছে৷ গত সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর আগের সপ্তাহ থেকে করোনার সংক্রমণ ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর আগের সপ্তাহে করোনায় সাতদিনে সংক্রমণ ছিল ৪৫ হাজার।
এদিকে, টানা ১১ সপ্তাহ পর আবারো হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে৷ গত সপ্তাহের থেকে চলতি সপ্তাহের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪ শতাংশ বেড়েছে৷ ৪ এপ্রিলের আগের সপ্তাহে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৩৭ হাজার।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আবারো করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। ইস্টার হলিডে ও স্প্রিং ব্রেকের কারণে দেশজুড়ে ভ্রমণ বেড়ে গেছে৷ এছাড়া সম্প্রতি ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সূত্র জানিয়েছে, যেসব বাসিন্দা করোনার টিকার ডোজ সম্পূর্নভাবে শেষ করেছে, তারা করোনা পরীক্ষার ফলাফল ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। সেই সাথে টিকা নেওয়া বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। এই ঘোষণার পর থেকেই মূলত ভ্রমণের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য ফ্লু যেমন গরম আসার সময় কিছুটা কমে যায়, করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নয়। ফলে গ্রীষ্মে কিছু অঞ্চলে আরেকটি করোনার সংক্রমণের ঢেউ দেখা দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
সোমবার (৫ এপ্রিল) শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এন্থনী ফাউসি বলেন, 'আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে করোনার সংক্রমণ কমে যাবে, এমনটা আমরা ভাবতে পারি না'।
গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ২৭টি অঙ্গরাজ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে তথ্য এসেছে। নিউ ইয়র্ক, মিশিগান ও নিউ জার্সিতে প্রতি লাখে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা- দুইটিই বেড়েছে৷
তবে গত সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ১৭ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিলো ৫ হাজার ৮০০ জন। সাধারণত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার দুই-এক সপ্তাহ পর মৃতের সংখ্যা বাড়ে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রেখে মৃতের সংখ্যা কমানো যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে সর্বপ্রথম ছড়ানো কেন্ট স্ট্রেইন খ্যাত B.1.1.7 ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই ছড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
সিডিসি জানিয়েছে, সোমবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ১৫ হাজার বাসিন্দা এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত রয়েছেন। ব্রিটেন থেকে ছড়ানো এই ভ্যারিয়েন্ট সাধারণ ভাইরাস থেকে আরো দ্রুত ছড়াতে পারে আরো অধিক প্রাণঘাতী বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ফ্লোরিডাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাসিন্দা নতুন এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ফ্লোরিডায় ৩ হাজার ১৯২ জন বাসিন্দা কেন্ট স্ট্রেইনে আক্রান্ত রয়েছে। এরপরই আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিশিগান- ১ হাজার ৬৪৯ জন। সাম্প্রতিক সময়ে মিশিগানের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পিছনে এই কেন্ট স্ট্রেইনের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে টিকা প্রয়োগ কর্মসূচি খুবই দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে করোনার সংক্রমণের ঢেউ থামানোর মতো যথেষ্ট বাসিন্দাকে এখনো টিকার মাধ্যমে সুরক্ষিত করা যায়নি।
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক টিকা প্রয়োগের রেকর্ড হয়েছে। সিডিসি সূত্র মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে ৪০ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে৷ গড়ে প্রতি সপ্তাহে ত্রিশ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিডিসি।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন