করোনায় সাম্প্রতিক মৃতদের অধিকাংশই টিকা নেননি
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক করোনায় যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই টিকা গ্রহণ করেননি বলে এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে টিকা গ্রহণের কার্যকরিতা প্রমাণিত হয়।
টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর হার কমছে। বর্তমানে করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা ৩০০ জনের কম।
মে মাসের প্রাপ্ত সরকারি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আক্রান্ত ৮ লাখ ৫৩ হাজারের মধ্যে টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ২০০ জন। যা মোট আক্রান্তের দশমিক এক শতাংশ।
এর পাশাপাশি মে মাসে করোনায় মৃত ১৮ হাজারের মধ্যে টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণকারীর ব্যক্তির সংখ্যা মাত্র ১৫০।
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কর্মকর্তারা বলেন, এই পর্যন্ত ৪৫টি রাজ্যে ব্রেক-থ্রু ইনফেকশন দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু রাজ্যে ইনফেকশনটি আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ইনফেকশনটির ভয়াবহ ঠিকমত বোঝানো যাবে না।
চলতি মাসের শুরুতে বাইডেন প্রশাসনের সাবেক করোনা বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্লাবিট বলেন, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই কোন প্রকার টিকা গ্রহণ করেননি।
সিডিসি ডিরেক্টর ড. রোচেল ওয়েলিনেস্কি মঙ্গলবার (২২ জুন) এক বিবৃতিতে বলেন , টিকাটি এতোটাই কার্যকর যে আক্রান্ত সিংহভাগের মৃত্যুই টিকা না নেয়ার কারণে হচ্ছে। তাঁর মতে, এসব মৃত্যু দুঃখজনক।
সিডিসির তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ১২ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কিনীদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা কমপক্ষে টিকার এক ডোজ গ্রহণ করেছেন। আর ৫৩ শতাংশ বাসিন্দা টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের যেসব অঞ্চলে টিকা গ্রহণের হার কম, সেসব অঞ্চলে শরত ও শীতকালে করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা যাবে। এতে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।
সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ মেটিক্স বিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী মোকদাদ বলেন, মডেলিং দেখে ধারণা করা যাচ্ছে যে দেশটিতে আগামী বছর হতে পুনরায় দৈনিক এক হাজার জন মারা যাবে।
আরকানসাস রাজ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম টিকা প্রয়োগ হয়েছে। এর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩৩ শতাংশ টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন। যার ফলে সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আশংকাজনক হারে বাড়ছে।
সিয়াটলের কিং কাউন্টির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বিগত ৬০ দিনের মধ্যে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৫ ভাগ ব্যক্তিই কোন প্রকার টিকা গ্রহণ করেননি। অপরদিকে, মৃতদের মধ্যে টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণকারী ব্যক্তির সংখ্যা ৩ জন।
মহামারি মোকাবিলা টাস্ক ফোর্সের নির্দেশক ড. অ্যালেক্স গার্জা বলেন, 'সেন্ট লুইস এলাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ৯০ শতাংশ কোনো টিকা নেননি'।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের মহামারি বিশেষজ্ঞ ডেডিভ মাইকেলস বলেন, 'টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে অনেকেই টিকা নিতে রাজি হবে'। অবশ্য তরুণরা নিজেদের পরিবার ও কাছের মানুষদের রক্ষার উদ্দেশ্যেই টিকা নিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মাইকেলস বলেন, 'টিকা নিতে ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলার জন্য অনেকেরই সবেতন ছুটি প্রয়োজন'।
দ্যা অকুপেশনাল সেফটি ও হেলথ অ্যাডমিনিট্রেশন (ওএসএইচএ) এই মাস থেকে হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সবেতনের ছুটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মাইকেলস মনে করেন, এই ধরণের ছুটি পোল্ট্রি ও অন্যান্য খাদ্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত কর্মীদেরও প্রয়োজন।
এলএবাংলাটাইমস/এমডব্লিউ
শেয়ার করুন