আপডেট :

        আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে দোকান ঘরে দুর্বৃত্তদের হামলা ব্যাপক ভাঙচুর

        ব্যাংক থেকে কোটি টাকা নিয়ে উধাও শ্রীকান্ত নন্দী

        আইইউবিতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু; বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা

        আইইউবিতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু; বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা

        ইসরায়েলকে গাজা যুদ্ধের ইতি টানতে হতে পারে

        মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট প্রত্যাহার;মতামত জানালেন বাইডেন ও ইরাকি প্রধানমন্ত্রী

        ইরানি প্রতিপক্ষ ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ফোনালাপ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের

        সীতাকুণ্ডে মুক্তিযোদ্ধার কবর ভাঙচুর

        মারা গেলেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়

        শাহরুখ মেয়ের পেছনে ঢালতে হচ্ছে ২০০ কোটি!

        নারায়ণগঞ্জে গান্দিঘাটে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

        প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি ও সহযোগিতায় দেশ পরিচালনায় যাত্রা মসৃণ হচ্ছে।

        প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি ও সহযোগিতায় দেশ পরিচালনায় যাত্রা মসৃণ হচ্ছে।

        ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের ওল্ড স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগুন লেগেছে

        ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের ওল্ড স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগুন লেগেছে

        সবকিছু যেন এক রাতেই পরিষ্কার হয়ে গেলো

        সালমানের বাড়িতে হামলা

        দেশে ফের বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য

        স্থায়ী জামিনের আবেদন; ডঃ ইউনূস

        আজ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে যাবেন ছয় মাসের সাজাপ্রাপ্ত নোবেলজয়ী ড. ইউনূস

পপগুরু আজম খানের জন্মদিন

পপগুরু আজম খানের জন্মদিন

বাংলা পপসঙ্গীতের জনক আজম খান। তার হাত ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলা গানের এক অন্য ধারা। স্বাধীন দেশের সংস্কৃতিতে তুমুল আলোড়ন তুলে সঙ্গীতের ধারায় নূতন আলোয়ে সঙ্গীত রচনা ও পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রজন্মের মধ্যে তিনি তারুণ্যের স্পন্দন বইয়ে দিয়েছিলেন। তাই তো বাংলাদেশের সঙ্গীতের ইতিহাসে আজম খান পপসঙ্গীতের অনন্য পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচ্য। তার গান ঠাঁই করে নেয় দেশের সঙ্গীতপ্রিয় কোটি শ্রোতার হৃদয়ে।

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারি কিংবদন্তি এই সঙ্গীতশিল্পীর জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এইদিনে ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে সঙ্গীতের এই পথিকৃৎ জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন। তাঁর শৈশবের অধিকাংশ কেটেছে সেখানেই।

১৯৫৫ সালে প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে বেবিতে ভর্তি হন। এরপর ১৯৫৬ সালে কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানে বসতি তাদের। ১৯৮১ সালে ১৪ই জানুয়ারি সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আজম খান। তখন তার বয়স ছিল ৩১ বছর। সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন কাটান সঙ্গীতের এই কিংবদন্তি। দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক ছিলেন আজম খান। বড় মেয়ে ইমা খান, মেজ ছেলে হৃদয় খান এবং ছোট মেয়ের নাম অরনী খান। এছাড়া আছেন চার ভাই, এক বোন।

পপসম্রাট আজম খান ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে। মাত্র ২১ বছর বয়সে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সে সময় তার গান সহযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন।

আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটি সেকশনের ইনচার্জ। ওই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন আজম খান। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে সংঘটিত অপারেশন তিতাস। মুক্তিযুদ্ধে সর্বশেষ মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংঘটিত যুদ্ধে পাক সেনাদের পরাজিত করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর তার ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখান্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখান্দ ও হ্যাপি আখান্দ) দেশব্যাপী সঙ্গীত জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেককে ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকাল করে অনুষ্ঠান শুরু করেন। ওই বছরই ‘এতো সুন্দর দু নিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি প্রচার হয় বিটিভিতে।

দুটো গানই ব্যাপক প্রশংসা আর দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের ব্যান্ড। আজম খান ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামে গান গেয়ে অভাবনীয় সাড়া পান। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।

শুধু সঙ্গীতেই নয়, মিডিয়ার অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার ছিল সরব বিচরণ। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামনের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন করেন। আরেকটি পরিচয়ে তার বেশ সুনাম ছিল। ক্রিকেটার আজম খান। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন।

এতোটা বর্ণিল কর্মযজ্ঞের মধ্যে ৬১ বছরে থেমে যায় তার জীবনগাড়ি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ৫ জুন না ফেরার দেশে চলে যান পপসঙ্গীতের অবিসংবাদিত সম্রাট। তবে এ যাওয়া শারীরিক প্রস্থানই কেবল। তার সমৃদ্ধ সঙ্গীতণ্ডার দিয়ে তিনি অনন্তকাল উজ্জ্বল থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আজম খানদের জন্ম হয়- যুগ যুগ আর শতাব্দী পেরিয়ে, এমন কীর্তিমানদের মৃত্যু নেই, মৃত্যু হয় না। তাঁরা বেঁচে থাকেন অগণিত মানুষের প্রেরণা হয়ে।

 

এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/ই

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত