আপডেট :

        ধর্ষকের শাস্তি সবার সামনে হোক: সোহম

        বায়ার্নের দাপটে বিদায় ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গো, পিএসজির মুখোমুখি কোয়ার্টারে

        ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরে রাজনৈতিক উত্তেজনা: কে দায়ী?

        ইরানের কঠোর হুঁশিয়ারি: ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি

        এশিয়া কাপের সম্ভাব্য সূচি জুলাইয়ে প্রকাশিত হবে

        সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ: জুলাই সনদ প্রকাশ করবে এনসিপি - নাহিদ ইসলাম

        রথযাত্রার উৎসবে বিপর্যয়: উড়িষ্যায় ভিড়ে পিষ্ট হয়ে ৩ মৃত, ১০ জন আহত

        মনু মিয়ার শেষ বিদায়ে অভিনেতা খায়রুল বাসারের মানবিকতার জয়

        মেসি-রোনালদো: সময় পেরিয়েও অপ্রতিরোধ্য ফুটবলের দুই কিংবদন্তি

        মুরাদনগরের অশান্তির জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতারা দায়ী: আসিফ মাহমুদ

        ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে পাকিস্তানে দুইবার কাঁপল ধরিত্রী

        হিরো আলমের যত্নে রিয়া মনি, প্রকাশ করলেন তার শারীরিক অবস্থা

        হাছিনা নয় শেখ হাসিনা নয়, তবুও বারবার বদলাচ্ছে স্কুলের নাম

        জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি টাকা

        কোকেন উৎপাদনে ঐতিহাসিক উচ্চতা, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উদ্বেগ

        ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক জোরদারে প্রস্তুত পুতিন, নতুন যোগাযোগের আভাস

        স্বর্ণের বাজারে ধস: এক মাসে সর্বনিম্ন দামে পৌঁছাল হলুদ ধাতু

        সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, ৩০০ গাড়ি অপেক্ষায়

        ট্রাম্পের দাবি: খামেনির প্রাণ বাঁচিয়েছি, ধন্যবাদ পাইনি

        এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা: কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে নতুন নিয়ম

চোখে অশ্রু নিয়ে দিল্লি ছাড়ছে আতঙ্কিত মুসলিমরা

চোখে অশ্রু নিয়ে দিল্লি ছাড়ছে আতঙ্কিত মুসলিমরা

সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে পুড়ছে দিল্লি। সহিংসতার একদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও বদলায়নি শহরের পরিস্থিতি। এখনও আতঙ্কে রয়েছেন সংখ্যালঘু মুসলিমরা। আরও বড় ধরনের হামলার আশঙ্কায় অনেকেই দিল্লি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।

গত ৩ দিনের সহিংসতায় শেষ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২ শতাধিক মানুষ।

এ নিয়ে দিল্লির বেশ কয়েটি এলাকার চিত্র তুলে ধরেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার। দিল্লি এক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা খাজুরি খাস। ওই এলাকার চার নম্বর গলির মুখটায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তাহির। কাঁদছিলেন পাশে দাঁড়ানো তার দুই পুত্রবধূও। গলির মুখ থেকে তাদের বাড়িটা ছিল চার-পাঁচটি বাড়ির পরেই। এখন গোটা বাড়িটাই পুড়ে ছাই।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ‘জয় শ্রীরাম’ধ্বনি দিতে দিতে বন্দুক আর ধারালো অস্ত্রশস্ত্র হাতে হাজারখানেক যুবক ঢুকেছিল তাহিরদের গলিতে। গলিতে ঢুকেই তারা মারধর শুরু করে সেখানকার বাসিন্দাদের। একই সঙ্গে ঘরে ঘরে চলে লুঠপাট। এরপর তারা একটা একটা করে বাড়িতে আগুন লাগাতে থাকে, জীবন্ত মানুষজনসহ। ফলে আগুনে পুড়ে মারা যায় বহু মানুষ। তবে তাহির ও তার পরিবারের লোকজনের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তারা।

বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলতে দেখে প্রাণে বাঁচতে আরও কয়েক জন পড়শির মতো তাহিরও তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে উঠে যান ছাদে। তারপর পেরুতে থাকেন এক ছাদ থেকে অন্য ছাদ। এভাবে কয়েকটি ছাদ ডিঙিয়ে তাহিররা পৌঁছে যান গলির শেষ মাথায়। সেখানে তখনও পৌঁছায়নি হানাদাররা। আর এভাবেই সেদিন পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন তাহিররা।

কিন্তু অত সহজে কি আর বাড়ির মোহ ছাড়া যায়? অনেক কষ্টে যে বানিয়েছিলেন বাড়িটা। তাই বুধবার বিকেলে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে বাড়িটা দেখতে এসেছিলেন তাহির। গিয়ে দেখেন, গোটা বাড়িটাই পুড়ে ছাই হয়ে রয়েছে। মোটামুটি তার মহল্লার সব বাড়িরই একই দশা। সেই দৃশ্য দেখার পর আর চোখের জল চেপে রাখতে পারেননি তারা। গলির মুখে এসে কাঁদতে কাঁদতে বার বার পিছনে ফিরে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি। দুই পুত্রবধূকে নিয়ে চার নম্বর গলির মুখেই বসে পড়েছিলেন তাহির।

ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাহির বলেন, ‘ওরা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। আমরা পড়িমড়ি করে বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করলাম। কোমর থেকে পঙ্গু আমার বউ। ও পারল না। আমার দুই ছেলেও গুরুতর জখম হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুই আমরা কিছুই খাইনি। আমার ছোট্ট ছোট্ট নাতি নাতনিরা পানি খেয়ে রয়েছে।’

অগ্নিসংযোগের হাত থেকে রেহাই পায়নি গলির হিন্দু বাসিন্দাদের ঘরবাড়িগুলোও। খাজুরি খাসের চার নম্বর গলিতে যত মুসলিম পরিবার থাকতেন, মঙ্গলবার গভীর রাতের ভয়াবহ ঘটনার পর তারা সকলেই সেখান থেকে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছেন। একই চেহারা মৌজপুর বাবরপুর ও ভাগীরথী বিহারের গলিগুলির। কোনও মুসলিম পরিবার আর সেখানে নেই।

এই কাহিনী শুধু খাজুরি খাসের নয়। মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহার, সর্বত্রই ছবিটা এক। গাড়ি নিয়ে সব্জি বেচেন ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ এফাজ। খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির মুখে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এমন ভয়াবহ ঘটনা এর আগে দেখিনি। ওদের সকলের হাতে ছিল বন্দুক, লাঠি, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। ওরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিচ্ছিল। ওই ধ্বনি দিতে দিতেই গলির একের পর এক ঘরবাড়িতে ওরা আগুন লাগাতে শুরু করল। গুলি চালাচ্ছিল এলোপাথাড়ি।’

তার আড়াই মাসের মেয়েকে লক্ষ্য করেও দুষ্কৃতীরা ইট, পাথর ছুড়েছিল, জানালেন খাজুরি খাসের আর এক বাসিন্দা সিতারা। সিতারা বললেন, ‘ওই সময় নিজেকে দিয়ে আমার বাচ্চাটাকে আড়াল করেছিলাম। বাঁচিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এখন ভাবছি, ওকে কী খাওয়াব, পরাব?’

খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির হিন্দু বাসিন্দারা কিন্তু ওই সময় তাদের মুসলিম পড়শিদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। মুসলিমদের ঘরবাড়িগুলি যখন পুড়ছে, তখন তাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে বালতির পর বালতি জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি, জানালেন চার নম্বর গলির এক হিন্দু বাসিন্দা। যিনি কিছুতেই তার নাম জানাতে চাইলেন না। কেননা তারও তো প্রাণের ভয় আছে। পরিচয় জানার পর তার ওপরও তো হামলা চালাতে পারে কট্টরপন্থী হিন্দুরা।

ওই খাজুরি খাসের এক গলিতেই থাকতেন দিনমজুর মোহাম্মদ আরিফ। বিজয় পার্ক এলাকায় দিনদু’য়েক আগে একটি কাজ পেয়েছিলেন আরিফ। কিন্তু ওই হামলার পর আর দিল্লিতে থাকার সাহস হচ্ছে না তার। তিনি প্রাণে বাঁচতে সব কিছু ছেড়েছুড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

গত রোববার থেকে টানা হিংসার ঘটনার পর খাজুরি খাস, মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহারের মুসলিম এলাকাগুলি খাঁ খাঁ করছে। বাড়িগুলি পুড়ে ছাই। শুধু খাজুরি খাস নয়, কম বেশি দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর অবস্থাই অনেকটা একই রকম। বসতি না বলে এলাকাগুলোকে বরং এখন শ্মশান বলাই ভালো।

ওই দুঃসহ সহিংসতার পর এখনও তৎপর হতে দেখা যায়নি মোদি প্রশাসনকে। বরং তারা ব্যস্ত আছে নিজেদের আড়াল করতে। এই নিঃস্ব মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়ায়নি কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তি। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের এই দরিদ্র মানুষগুলো যে ঘরবাড়ি হারিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে এ নিয়েও মোদি বা দিল্লি সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত