আপডেট :

        চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা

        কেন্দ্রীয় কি ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে, প্রশ্ন টিআইবির

        ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

        বিমান হামলায় নিহত এক নারীর গর্ভ থেকে প্রসব হওয়া সন্তানটি মারা গেছে

        ফেনীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কিশোর গ্যাং গ্রেফতার

        তাপ্প্রবাহে ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

        তিন দিনের সফরে বর্তমানে চীনে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        ভারতীয় দলে হার্দিক পাণ্ডিয়া ও বিরাট কোহলি নেই

        উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৩ জনকে সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার

        ভারতে ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে বিনামূল্যে খাবার

        থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রধানমন্ত্রীর

        বাজারে বেড়েই চলছে অস্থিরতা

        ইংরেজ গায়ক, গীতিকার ও সঙ্গীতজ্ঞ জন লেননের গিটার

        ইংরেজ গায়ক, গীতিকার ও সঙ্গীতজ্ঞ জন লেননের গিটার

        ভারতে আজ চলছে ৭ দফা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা

        উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল

        মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য উন্নতি

        প্রচণ্ড এই গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়ে দোয়া

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার

        এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ও তার ইতিবাচক কর্মকাণ্ড তবু আশার আলো নেই

শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ও তার ইতিবাচক কর্মকাণ্ড তবু আশার আলো নেই

৭ লাখ কোটি টাকার বেশি (৮১ বিলিয়ন ডলার) অর্থনীতির দেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। তিন বছর আগেও সবার ধারণা ছিল যে শতভাগ শিক্ষিত মানুষের এই দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং এর মূল ভিত্তি ছিল পর্যটন থেকে আসা আয় যা ক্রমশ বাড়ছিল এবং একই সঙ্গে রেমিট্যান্সও। প্রতি বছর কেবলমাত্র পর্যটন থেকেই ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলার আয় ছিল। দুই বছরের করোনাকালে সেটি কার্যত শূন্যতে গিয়ে ঠেকেছে।

২০১৯ সালে কলম্বোয় যে হামলা হয়েছিল সেটি এবং তার জেরে পরে ব্যাপক মুসলিম নিগ্রহের ঘটনাও পর্যটন ধসে ভূমিকা রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আর ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় দেশটিকে তিলে তিলে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে এসেছে। করোনার দুই বছরে রেমিট্যান্স থেকে আয়ও কমেছে ব্যাপকভাবে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে দুর্নীতিকেই শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিণতির মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এর প্রভাব পড়ছে রাজাপাকসে পরিবারের ওপর।

প্রায় দেশেই সরকারবিরোধী আন্দোলন হয় এবং সরকার নির্বাচন দিয়ে জিতলে ক্ষমতায় থাকে এবং হারলে বিদায় নেয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় সেই নির্বাচন আয়োজনে শাসনতান্ত্রিক বাধা থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৯ সালে এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে ২০২০ সালে। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের আগে এসব নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ আড়াই বছর গেলে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভাঙতে পারেন সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে। এছাড়া পার্লামেন্ট নিজে প্রস্তাব পাশ করে প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভাঙার অনুরোধ করতে পারে। আর প্রেসিডেন্টকে সরাতে পার্লামেন্ট অভিশংসন করাতে পারে বা তিনি নিজ ইচ্ছায় সরে যেতে পারেন। কিন্তু এর কোনো কিছুই সম্ভব হবে না। কারণ এখনকার পার্লামেন্টে মাহিন্দা রাজাপাকসের দলই ব্যাপক সংখ্যাগিরষ্ঠতায় আছে।

প্রধানমন্ত্রী হয়েই যত পদক্ষেপ রনিলের: শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর জানিয়েছে, গত ১২ মে ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমসিংহে। এর আগে পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। কিন্তু তারপরও তাকেই প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। যদিও বিরোধী সাজিত প্রেমাদাসাকেই প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু সাজিত সেই প্রেসিডেন্টেরই পদত্যাগ চান। ফলে তার আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি। রনিল বিক্রমসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী করার পেছনে মূল কারণ হিসেবে গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে যে, তিনি পুজিবাদী ধাঁচের মানুষ। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে তাই অনেকটাই ভূমিকা পালন করতে পারেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে অর্থের জোগান দিতে পারবেন।

রনিল বিক্রমসিংহের আপাতত কর্মকাণ্ড বলে দিচ্ছে যে, তিনি তার কাজটি দায়িত্ব নিয়েই শুরু করেছেন। শপথের পরই প্রধানমন্ত্রী রনিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং তার আমলে তিনি ভারতের সম্পর্ক উন্নত করতেও সচেষ্ট থাকবেন বলে জানিয়েছেন। শপথের পরদিনই তিনি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত এবং জাপানের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি সেখানে সংকট উত্তরণে এসব দেশের সহায়তা চেয়েছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ও কারফিউ তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট মোকাবিলা করতে একটি কমিটি করে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে দলীয় রাজনীতির বিভেদ ভুলে দেশকে বাঁচাতে বিরোধী নেতা সাজিত প্রেমাদাসাকে নতুন সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে শনিবার নতুন চার মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।

তারপরও আশার আলো নেই: জার্মান মিডিয়া ডয়চেভেলে জানায়, শ্রীলঙ্কায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগও আশার আলো দেখাতে পারছে না। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীরা। বিরোধীরা রাজাপাকসে পরিবারের পতন দাবি করছে। যদিও প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া পদত্যাগ করতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমনকি সাজিত প্রেমাদাসাও প্রধানমন্ত্রীর চিঠির পালটা জবাব দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, তারা বহুদলীয় সরকার চান।

তবে এই সরকারে রাজাপাকসে পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবে না। বিক্ষোভকারীরা তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তারা সরকার দলীয় এমনকি বিরোধী দলীয় এমপিদের বাড়িতেও হামলা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রনিল আর্থিক সংকট কতটা দূর করতে পারবেন তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

আবার কারো কারো মতে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। কিন্ত যেভাবে সহিংস আন্দোলন চলছে তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার বিনিয়োগ করবেন এমন আশা করাটা হয়তো ঠিকই নয় বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। ফলে বিক্ষোভ না থামানো পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে রনিলের নিয়োগে যে আশার আলো দেখা গিয়েছিল বিরোধীদের কড়া মনোভাবে সেই আলো যেন নিভতে চলেছে।

আবার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, একসময়ের পরাজিত তামিলরা আবার সংগঠিত হতে শুরু করেছে। এদেরকে দমন করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। যদিও শ্রীলঙ্কা সরকার এই তথ্য অস্বীকার করেছে। তবে সত্যিই এমনটা হলে শ্রীলঙ্কা হয়তো আবার গৃহযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হবে। ফলে সহসাই দেশটির পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বিরোধী দলগুলোর অবস্থা: বিবিসি জানায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জেহান গুনাতিলক বলছেন যে, পার্লামেন্টে বিরোধী দল এখনো ছোট। তারা এবার সংকটের শুরু থেকেই পার্লামেন্টে অনেক সোচ্চার। কিন্তু মানুষ আশা করেছিল তারা আরো সোচ্চার হবে। বিরোধী দল আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলবে এখন যারা ক্ষমতায় আছে তাদের বিকল্প কী হতে পারে। ড. জেহানের মতে, মনে রাখতে হবে যে, বিরোধীরা সংখ্যায় খুবই কম। কোনো নির্বাচন ছাড়া তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। প্রকৃত পরিবর্তন বা নতুন কাউকে আনতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমেই আনতে হবে। না হলে বিষয়গুলো এর মধ্যে এভাবেই ঘুরপাক খাবে।

গুনাতিলক বলছেন, শুধু পরিবারতন্ত্র নয়, প্রভাবশালী দেশগুলোর শক্তি নিয়েও অনেক রাজনীতিক দেশ পরিচালনা করেন। যে কারণেই তাদের অনেক সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থ নষ্ট করে। আবার যেই পরিবারতন্ত্রের জন্য রাজাপাকসে পরিবারের সমালোচনা হচ্ছে সেই পরিবারতন্ত্রেরই ফসল বিরোধী প্রধান নেতা নিজেও, যার বাবা রনসিংহে প্রেমাদাসা ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আবার দেশটিতে প্রায় ৭০টির মতো দল থাকলেও পার্লামেন্টে আছে মাত্র ১০ বা ১১টি।

এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/আই

[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত