মোদির প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে এগিয়ে কেজরিওয়াল!
ভারতে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে এখন থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে। দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়া শনিবার জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লি, পাঞ্জাব জয় করার পর, আপ যে এখন আরো আত্মবিশ্বাসী, তা সিসৌদিয়ার এই কথা থেকেই স্পষ্ট। তার এই বক্তব্যের পর ভারতের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাভেদ এম আনসারির মতে, বিরোধী শিবিরের নেতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এনডিটিভি অনলাইনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ২০২৪ সালের যুদ্ধটিতে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী নিয়ে নয়, বরং কে হবেন নরেন্দ্র মোদির বিরোধী প্রার্থী (চ্যালেঞ্জার) তা নিয়েই এই মুহূর্তে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
এই দৌঁড়ে সর্বশেষ নাম লিখিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরতে ‘মেক ইন্ডিয়া নাম্বার-ওয়ান’ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যে তার জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও চান বিরোধীদের প্রধান মুখ হতে। আর কংগ্রেস মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাহুল গান্ধীকেই সামনে আনতে চাইবে।
তবে অন্যদের চেয়ে এই মুহূর্তে কেজরিওয়ালই এগিয়ে রয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে ভারত জুড়ে তার দলের ভিত শক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন। জাতীয়ভাবে নিজের ইমেজ তৈরিরও চেষ্টা করছেন তিনি। দিল্লি ছাড়াও, আম আদমি পার্টি হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গোয়ার মতো রাজ্যগুলোতে ভালো অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে যাতে তারা শিগ্গিরই জাতীয় পর্যায়ে কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। তাদের এজন্য কৌশলটি হলো জনপ্রিয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে জনগণকে দৃশ্যমান সুবিধা প্রদান করা। জনগণের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে সফলভাবে এই অর্জনগুলোকে সম্প্রসারিত করা। আর শক্তিশালী সংগাঠনিক দক্ষতা তৈরি করা, যা নির্বাচনের কাজে দেবে।
ভারতের অন্যতম সুপরিচিত রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়নকারী প্রশান্ত কিশোরের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য অপরিহার্য তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। এগুলো হলো : এক জন বার্তাবাহক, স্পষ্ট ও আবেদনমূলক বার্তা এবং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে একটি মডেল দাঁড় করানো। আম আদমি পার্টি এবং এর রাজনৈতিক সংগঠকরা নিশ্চিত যে, নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এসব গুণ রয়েছে।
আম আদমি পার্টির গেম প্ল্যান তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে করা হয়েছে। প্রথমটি কেজরিওয়ালের ইমেজ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এখনো ভালো ইমেজ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতির অভিযোগ নেই। দ্বিতীয়টি তার সরকারের ‘ডেলিভারি এবং ট্র্যাক রেকর্ড।’ তিনি একটি জনপ্রিয় সরকার পরিচালনা করছেন, যারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ করছে। তার সরকার রাজধানীর স্বাস্হ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশংসনীয়ভাবে নতুন উচ্চতায় নিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রে সুযোগ পেলে শাসন ব্যবস্থার এই ধরন অনুসরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এটা স্পষ্ট যে, বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলই বিজেপিকে এককভাবে পরাজিত করার মতো অবস্থায় নেই। তবে ২০২৪ সালের আগে সব বিরোধী দল একজোট হয়ে নির্বাচন করলে সেটা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তিনিই আবির্ভূত হতে পারেন—যার গ্রহণযোগ্যতা বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কৌশল প্রণয়নকারীরা মনে করেন যে, মমতা ব্যানার্জি এবং কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে একে-অপরের বিরুদ্ধে যাবে। বারবার জোট পরিবর্তনের ঘটনা নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধেই যেতে পারে। এ অবস্থায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন কেজরিওয়ালই।
তিনি হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে বিরোধী নেতাদের মতো অবস্থান নেননি। যা তাকে বিজেপির আদর্শের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়নি। এই ইস্যুতে তিনি সতর্কভাবে এগিয়েছেন যাতে ডানপম্হি ভোটাররা ক্ষুব্ধ না হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির বিকল্প হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য তিনি এই কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন।
তবে এখন পর্যন্ত মোদির প্রতি জনগণের বড় সমর্থন রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে তার একটি অসাধারণ সংযোগও রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ না-ও হতে পারে। তবে তাকে কে চ্যালেঞ্জ করবেন, সেটাই দেখার বিষয় হতে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/আই
[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]
শেয়ার করুন