আপডেট :

        শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন

        সেনা-স্থাপনায় হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের

        আওয়ামী লীগের বিষয়ে ফয়সালা

        জম্মু বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ

        জন্ম নিচ্ছে ৬ হাজার শিশু

        ডিমের দাম বাড়ছে, কিন্তু মুরগি পালন কি সত্যিই সাশ্রয়ী? অভিজ্ঞ খামারিদের মতামত

        থ্রি ডোরস ডাউন ব্যান্ডের ব্র্যাড আর্নল্ডের স্টেজ-৪ ক্যানসার, সামার ট্যুর বাতিল

        গ্রিনল্যান্ডে গুপ্তচরবৃত্তি: মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করলো ডেনমার্ক

        লিবিয়ায় অভিবাসীদের বহিষ্কার পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করলেন মার্কিন বিচারক

        কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভে পুলিশের অভিযান, বহু শিক্ষার্থী আটক

        চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে তরুণকে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা

        ট্রাম্পের বিলাসবহুল ডিনারে মাথাপিছু দেড় মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা হয়

        দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে

        ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল

        এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে উল্লখে করেছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির ও মাহিরা খান

        স্কুলে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না বাস্ত্যুচ্যুতরা, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৫

        মার্কিন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে এখন থেকে রিয়েল আইডি বাধ্যতামূলক

        সরকারি চাকরি ফিরে পাচ্ছেন জিয়া পরিবারের সদস্য ডা. জোবাইদা রহমান

        আগুন নিয়ে খেলছে ভারত

        ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উদ্বেগ

আরো ঘনীভূত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট

আরো ঘনীভূত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট

গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ইরান সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। পালটা ব্যবস্থা হিসেবে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সর্বশেষ সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনায় পালটা হামলার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

অন্যদিকে ইরান বলেছে, যে কোনো হামলার কড়া জবাব দিতে তারা প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের এই পালটাপালটি অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এ পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলার শুরু থেকেই ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি এই সংঘাত যেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যত্র ছড়িয়ে না পড়ে সে চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনা টার্গেট করে হামলা হচ্ছে। একই সঙ্গে লোহিতসাগরেও যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।

সর্বশেষ গত রবিবার সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে একটি ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন সিরিয়া এবং ইরাকে থাকা ইরানি বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে এই হামলা চালানো হবে। ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে পরিচিতি ঐ গোষ্ঠীটিতে এমন কিছু সশস্ত্র যোদ্ধা রয়েছে যাদেরকে অস্ত্র, তহবিল ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী রেভোলিউশনারি গার্ডস ফোর্স। ধারণা করা হয়, গত রবিবারের হামলার পেছনে এই গোষ্ঠীর হাত ছিল। তবে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী- সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় যে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল তা ইরানেই তৈরি করা এবং ইউক্রেনে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে রাশিয়ায় ইরান যে ড্রোন পাঠিয়েছে তার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরানের মাটিতে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের চাপ রয়েছে। এর মধ্যে ওয়াশিংটনে থাকা ইরানের কট্টর সমালোচকরাও রয়েছেন। তবে জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি ঐ অঞ্চলে সংঘাত বিস্তৃত করতে চান না।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, তার দেশ যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে হামলা করা হলে জবাব দেবে তেহরান। ইতিমধ্যে সিরিয়া থেকে সিনিয়র অফিসারদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনী।

নিয়ন্ত্রণহীন ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো

মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই তেহরানের। এই গোষ্ঠীগুলো গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন বাহিনীর ওপর ১৬০টি হামলা চালিয়েছে। হয়তো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আর্থিক ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করলেও, হামলার নির্দেশ দেয়নি ইরান। যে কারণে এই অঞ্চল এখন সম্ভবত সবচেয়ে জটিল সময় অতিবাহিত করছে। এসব গোষ্ঠীর বেপরোয়া আচরণ বড় ধরনের সংঘাত ডেকে আনতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান বৈরিতা

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র, এই দুই দেশের মাঝে বৈরিতার ইতিহাস আজ নতুন না। বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতার শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। ঐ সময় ইরানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদেক তেল সম্পদকে সরকারিকরণ করতে চেয়েছিলেন। কারণ, এর বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করত ব্রিটিশরা। কিন্তু এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। মনে করা হয় যে, এই অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের ভূমিকা ছিল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মোহাম্মদ রেজা শাহ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখন ইসলামপন্থি নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে যান। তবে শাহের বিরোধিতা করার পর তিনি নির্বাসনে ছিলেন। কিন্তু, সত্তরের দশকে ইরানের জনগণের বড় অংশ শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে প্যারিস থেকে খামেনি আবার ইরানে ফিরে আসেন। ঐ বছর থেকেই খামেনি হয়ে ওঠেন দেশটির প্রথম ‘সুপ্রিম লিডার’।

সেই সময় নতুন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে আমেরিকাবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে খামেনিপন্থি ছাত্ররা তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে ঢুকে পড়ে। ৫২ জন আমেরিকানকে ৪৪৪ দিন জিম্মি করে রাখে তারা। এই ঘটনায় প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে ইরাককে নানাভাবে সাহায্য করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। টানা আট বছর পর একটা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন খামেনি। এরপর এই দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ত হতেই থাকে। তেহরান ইঙ্গিত দেয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল তাদের প্রধান শত্রু। ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ গুলি করে তেহরানের একটি বিমানকে ভূপাতিত করে। এটাকে ভুল হিসেবে স্বীকার করলেও এর জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নজর পড়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর। তখন আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায় ইরানের তেল রপ্তানি ও অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ে। ২০১৫ সালের চুক্তির আলোকে ইরান তাদের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এ চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ট্রাম্পের নির্দেশে ২০২০ সালে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয় ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে।

এই হত্যাকাণ্ডের পর দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে এবং এই উত্তেজনার সঙ্গে নতুন করে যোগ হলো জর্ডানের টাওয়ার ২২-এ হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা।

 এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত