এয়ারএশিয়ার বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার
এয়ারএশিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে মৌসুমি ঝড়ই দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের অপারেশন কো-অর্ডিনেটর সুরিয়াদি বামবাং সুপ্রিয়াদি গতকাল সোমবার বলেন, 'এটা বিস্ফোরিত হয়েছে চাপের কারণে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে, পানির ওপর আছড়ে পড়ার ফলে বিমানটির ওপর তাৎক্ষণিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাতেই বিমানটির প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে।' প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান। বিধ্বস্ত বিমানটির ব্ল্যাকবক্স ডাটা রেকর্ডার গতকাল উদ্ধার করেছে ইন্দোনেশীয় নৌবাহিনী। খবর :এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।সুপ্রিয়াদি জানান, বিমানের কেবিনের ভেতর বিপুল চাপের সৃষ্টি হয়। কেবিনটি এ চাপ প্রশমিত করার আগেই বিমানটি ডুবে যায়। আর অনিবার্যভাবেই বিস্ফোরিত হয়। ওই এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়।বিধ্বস্ত এয়ারএশিয়া বিমানের দুর্ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে খুবই জরুরি 'বল্গ্যাকবক্স' ডাটা রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ইন্দোনেশীয় নৌবাহিনীর কয়েক ডজন ডুবুরি এটি উদ্ধার করেন। এ ছাড়া বিমানের ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের প্রধান বামবাং সোয়েলিস্তো এ সব তথ্য জানিয়েছেন। বিমান দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার হলো। বিমানের একটি পাখার ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে এটি উদ্ধার করা হয়। বিমান বিধ্বস্তের কারণ উদ্ঘাটনে এটি সহায়তা করবে বলে আশা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বামবাং সোয়েলিস্তো বলেন, '৭টা ১১ মিনিটে ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার নামে পরিচিত ব্ল্যাকবক্সের অংশটি তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি।' সোয়েলিস্তো আরও জানান, ভয়েস রেকর্ডারের সন্ধান পাওয়া গেলেও এখনও এর কাছে পেঁৗছানো ডুবুরিদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ডুবুরিরা এটি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিমানের ফ্লাইট রেকর্ডার ও ভয়েস রেকর্ডার দুটিই সাধারণভাবে ব্ল্যাকবক্স নামে পরিচিত। ব্ল্যাকবক্সটির ভয়েজ রেকর্ডারের জরুরি ট্রান্সমিটার থেকে আসা 'পিং' থেকে এর অবস্থান নির্ণয় করা গেলেও এটি উদ্ধার এখনও বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় যানবাহন নিরাপত্তা কমিটির প্রধান তদন্তকারী মাদজোনো সিসওসুয়ার্নো।তথ্য বিশ্লেষণের লক্ষ্যে উদ্ধারকৃত ডাটা রেকর্ডারটি দেশের রাজধানী জাকার্তাতেই নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে তথ্য বিশ্লেষণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ব্ল্যাকবক্সটি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দুই দিনের মধ্যেই এ থেকে তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানান সোয়েলিস্তো। তবে ডাটা রেকর্ডারটির অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানাননি তিনি। ব্ল্যাকবক্সটি রাজধানী জাকার্তায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পর ব্ল্যাকবক্স থেকে তথ্য উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করতে মাসখানেক লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
২৮ ডিসেম্বর ১৬২ আরোহী নিয়ে এয়ারএশিয়ার বিমানটি ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুর রওয়ানা হয়েছিল। অর্ধেক পথ যাওয়ার আগেই ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়া ফ্লাইট কিউজেড৮৫০১ বিমানটির সঙ্গে ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক দিনের ব্যাপক অনুসন্ধানের পর জাভা সাগরে বিমানটির ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। জাভা সাগর থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ জন আরোহীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বিমানটির মূল কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেলে আরও লাশ পাওয়া যাবে আশা করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
শেয়ার করুন