বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
ক্রিস গেইলকে টপকে গেলেন গাপটিল
সেমি ফাইনালে নিউজিল্যান্ড
আন্দ্রে রাসেলের ফুল টসটা এসেছিল পা বরাবর। ওয়েস্ট
প্যাক স্টেডিয়ামের ৩৪ হাজার দর্শক বিস্ফারিত চোখেদেখল, বলটা ছাদ টপকে চলে গেল বাইরে! মার্টিন গাপটিলেরমুখে মৃদু হাসি, গ্যালারির দিকে কাকে যেন দুই আঙুলদেখালেন। টিভি ক্যামেরা খুঁজে নিল, হাসছেন নিউজিল্যান্ডেরব্যাটিং কোচ ক্রেইগ ম্যাকমিলানও। বুড়ো আঙুল দেখিয়েযেন অনুচ্চারে বললেন, ‘চালিয়ে যাও!’ এর আগে ওয়েস্টপ্যাকের ছাদে বল পাঠানোর কীর্তিটা ছিল ওইম্যাকমিলানেরই। গাপটিলের ইঙ্গিতটা অনেকেই বুঝেনিয়েছিলেন।দুই আঙুল উঁচিয়ে কি আরেকটা বার্তাও দিলেন গাপটিল? ১৩বছর বয়সে গুরুতর এক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেছিলেন বাঁপায়ের তিন আঙুল। অনেকে হয়তো ক্রিকেট খেলার স্বপ্নওখানেই শিকেয় তুলে রাখতেন। গাপটিল অন্য ধাতুতে গড়া।নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন ধীরে ধীরে।দুই আঙুলের জন্য তাঁর ডাকনামই হয়ে গিয়েছিল ‘টু টোজ’।কিন্তু নিজেকে এমন একটা জায়গায় দেখার স্বপ্ন কি কখনোদেখেছিলেন ২৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান?ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবেআর যা-ই হোক গাপটিলের নামটি কেউ ভাবেনি। তবেঅনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন, দেড় বছর আগে ইংল্যান্ডেরসঙ্গে গাপটিলের ১৮৯ রানের একটা ইনিংস আছে। এত দিনওটাই ছিল নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ ইনিংস। কাল সেইগাপটিলই করে ফেললেন ডাবল সেঞ্চুরি। শুধু ডাবল সেঞ্চুরিইতো নয়, এটি এখন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ইনিংস—অপরাজিত২৩৭ রান। মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানেই পেছনের পাতায় চলেগেল ক্রিস গেইলের ২১৫।ক্যারিবীয় বিধ্বংসী ওপেনার ক্যানবেরায় যে ইনিংসটিখেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এটি ওয়ানডের দ্বিতীয়সর্বোচ্চ ইনিংস। রোহিত শর্মার ২৬৪ রয়েছে চূড়ায়।২৩৭ রানের ইনিংসটার মাহাত্ম্য বোঝাবে ছোট্ট একটাপরিসংখ্যান—ওয়েস্ট প্যাক স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করেগড় স্কোরই ২৩৫! নিউজিল্যান্ড ইতিহাসের প্রথম ডাবলসেঞ্চুরিয়ান, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত ইনিংস,প্রথম কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুইসেঞ্চুরি। গাপটিলের বরমাল্য কাল ফুলের ভারে যেন নুয়েইপড়ল!ম্যাচের প্রথম বল খেলেছেন, খেলেছেন শেষটিও। ১৬৩ বলে২৩৭ রানই বোলারদের ওপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের তীব্রতাবোঝায়। ২৪টি চার ও ১১টি ছয় সেই সাক্ষ্য দেয়ও বটে। তবেবোবা স্কোরকার্ড বলতে পারে না, এই উন্মত্ততার মধ্যেওছিল একটা শান্ত সমাহিত সৌন্দর্য। এই তুমুল ধ্বংযজ্ঞেরমধ্যেও ছিল ধ্রুপদ সংগীতের অপূর্ব সিম্ফনি। আধুনিকক্রিকেটের প্রতীক হয়ে যাওয়া সুইচ হিট, স্লগ বা রিভার্সসুইপ বা স্কুপ খুঁজতে গেলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। দারুণসব স্কয়ার কাট আছে, অথচ উইকেটের পেছনে একটা ছয়ওনেই। স্রেফ ক্রিকেটীয় সব শট খেলেই হাসতে হাসতে খুনকরেছেন হোল্ডারদের।সেই কাজটাও করেছেন কী অনায়াস ছন্দে! প্রথম ৫০ করতেখেলেছেন ৬৪ বল, পরের ৫০ করতে লেগেছে ৪৭ বল। পরেরঅর্ধশতক ২৩ বলে, আর ১৫০ থেকে ২০০ করেছেন ১৮ বলে!এমন একটা ইনিংস খেলার পর আত্মতৃপ্তিতে ভেসে যাওয়াইস্বাভাবিক। অথচ ম্যাচ শেষে গাপটিলের কাছে বড় হয়ে উঠলপরের ম্যাচের করণীয়, ‘আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি,এই ম্যাচ জয়ের আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকলে চলবে না।’ নিজেরএত বড় কীর্তি নিয়েও কী বিনয়ী, ‘ব্যাট করতে নামার সময়তো একটু চাপ থাকেই, কিন্তু আমি সেটা মাথায় নেওয়ারচেষ্টা করিনি। আজ যা করতে চেয়েছি সবকিছুই ভাগ্যেরছোঁয়ায় কীভাবে যেন হয়ে গেছে।’ও হ্যাঁ, ম্যাচের পর গাপটিল হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজেরমারলন স্যামুয়েলসকে একটা ধন্যবাদ দিয়েছেন। ইনিংসেরতৃতীয় বলেই জেরোম টেলরের বলে যে গাপটিলের ক্যাচফেলেছিলেন স্যামুয়েলস! অনেকেই এমন ভাগ্যের পরশ পান,কিন্তু কজন সেটিকে কাজে লাগিয়ে খেলতে পারেন এমনহিরণ্ময় ইনিংস!
শেয়ার করুন