বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের কিশোরদের ইতিহাস
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ছোটদের আসরে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশের কিশোররা। ঠিক ১২ বছর আগের ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটলো। ২০০৩ সালে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে। একযুগ পর সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ভারতের বিপক্ষে সেই টাইব্রেকারেই জয় পেয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দল। প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে বড়দের পথেই হাঁটলো ছোটরা। গতকাল বিকালে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ভারতকে হারিয়ে অপরাজিত থেকেই সাফ সেরার খেতাব জিতেছে। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকলে টাইব্রেকারে ফলাফল নির্ধারণ হয়। পেনাল্টি শুটআউটে বাংলাদেশের কিশোররা টানা চার শটেই গোল করলেও ভারত করেছে দু’টি। নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে ফাহিম মোরশেদ ও ভারতের অময় অবিনাশ একটি করে গোল করেন। টাইব্রেকারে স্বাগতিক দলের ফাহিম মোরশেদ, তানভীর আলম সজিব, আতিকুজ্জামান আতিক ও সাদ উদ্দিন গোল করেন। ভারতের সৌরভ মেহের ও মো. রাকিব গোল করলেও ব্যর্থ হন অভিজিত ও সাকলাইন।কাল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে উপচেপড়া দর্শকের উপস্থিতিতে শুরু হয় বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল ম্যাচ। ম্যাচের শুরু থেকেই উজ্জীবিত বাংলাদেশ আক্রমণাত্ম ফুটবল উপহার দেয়। হাজার হাজার দর্শকের করতালিতে যেন জ্বলে উঠে তারা। একের পর এক আক্রমণ চালায় প্রতিপক্ষ ভারতের রক্ষণদুর্গে। শুরুতে কিছুটা ধীরগতিতে এগুলেও ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর শিষ্যরা। বাংলাদেশ ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ পায় ২৪ মিনিটে। কিন্তু তা নষ্ট করেন মুস্তাজিব খান। এসময় বামপ্রান্ত থেকে ক্রস করেন মোহাম্মদ শাওন। তার ক্রসে মুস্তাজিব হেড নিলেও তা অল্পের জন্য বারের উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে আরেকবার দূরপাল্লার শট নেন শাওন। কিন্তু সেটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৩৫ মিনিটে বামপ্রান্ত থেকে অধিনায়ক শাওন হোসেনের বাড়িয়ে দেয়া বল মোহাম্মদ শাওন ক্রস করেন। ভারতের গোলরক্ষক তা ফিস্ট করে ফিরিয়ে দিলেও বক্সের বাইরে মুস্তাজিব বল পান। তিনি দূরপাল্লা শট নিলেও ভারতীয় গোলরক্ষক অ্যাইমল তা লুফে নেন। ম্যাচের প্রথমার্ধ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ৩৭ মিনিটে সহজতম সুযোগ পায় ভারত। এসময় ফরোয়ার্ড রহিম আলী বক্সের মধ্যে বল পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের অধিনায়ক শাওন কৌশলে তাকে আটকে দেন। ফলে গোলরক্ষক ফয়সাল চলন্ত বল তালুবন্দি করেন। গোলশূন্য অবস্থায় প্রথমার্ধ শেষ হলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোল পেতে মরিয়া হয়েই লড়ে স্বাগতিক ফুটবলাররা। যে কারণে সাফল্যও পায় তারা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে মোহাম্মদ শাওনের ক্রস বক্সের মধ্যে পড়লে সেখানে জটলার সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে বল বাউন্স ব্যাক করে পেছনে আসলে তা পেয়ে যান ফাহিম মোরশেদ। তিনি মাটি কামড়ানো শটে গোল করে আনন্দে ভাসান পুরো দেশকে (১-০)। অবশ্য লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৫১ মিনিটে বাংলাদেশের সাদ উদ্দিন মাঝ মাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে ডান দিকে বক্সের মধ্যে ঢুকে শট নিলেও তা ভারতের গোলরক্ষক তা নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন। এরপর ভারত কিছুটা আক্রমণের ধার বাড়ায়। ৫৫ মিনিটে কর্নার কিক থেকে ভারতের অভিজিত সরকারের নেয়া শট বাংলাদেশের গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ প্রতিহত করেন। ৬৩ মিনিটে ফ্রি-কিক পায় ভারত। তা থেকেই তারা সমতায় ফিরতে পারতো। কিন্তু ভারতীয় ফরোয়ার্ড অফসাইডের ফাঁদে পড়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। অবশ্য পরের মিনিটেই সমতায় ফিরে অতিথি দল। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ডানপ্রান্তের ডি-বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার দুর্দান্ত শটে গোল করে সমতা আনেন ভারতের অময় অবিনাশ (১-১)। এরপর কখনো বাংলাদেশ কখনো ভারত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিলেও আর কোন গোল হয়নি। তবে ৭৮ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। এসময় ফাহিম বক্সের মধ্যে বল পেয়েও তা বাইরে মারেন। ম্যাচের যোগ করা সময়ে খলিল ভুঁইয়ার ক্রসে বল পেয়ে তা বাইরে মেরেই নষ্ট করেন বদলি খেলোয়াড় রনি। অতিরিক্ত সময়ের ২ মিনিট চলার পর বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিলে ৮ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। এরপর ফ্লাড লাইট জ্বললে বাকি ২ মিনিট খেলা হলেও কোন দলই দ্বিতীয় গোলে দেখা পায়নি। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে নিজেদের প্রথম দু’শটে গোল করে দু’দলই। বাংলাদেশ তৃতীয় শটেও গোল পায়। কিন্তু ভারত ব্যর্থ হয়। ভারতের পক্ষে তৃতীয় শট নেন অভিজিত। স্বাগতিক গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদকে বোকা বানাতে গিয়ে বার ঘেঁষে শট নেন তিনি। কিন্তু তার শট সাইডবারে লেহেগ ফিরে আসে। বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ শটে গোল করে সাদ উদ্দিন শিরোপা স্বপ্ন উজ্জ্বল করেন। অন্যদিকে ভারতের সাকলাইনের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরে সেই স্বপ্নকে সত্যি করেন লাল-সবুজ গোলরক্ষক ফয়সাল। এখানেই শেষ টাইব্রেকার নাটকের। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের দাপুটে জয় পেয়ে ঐতিহাসিক শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কিশোররা শেষ করেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ।
শেয়ার করুন