বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
সাঙ্গাকারা কাঁদলেন, কাঁদালেন
বিদায় বেলায় বেশ আবেগমথিত হয়ে উঠল কণ্ঠস্বর। নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। বিদায়ের লগ্নে মনটা এমনিতেই ভারী হয়ে ছিল, বাবা-মা, ভাইবোন, কাছের স্বজনদের উপস্থিতি হার মানল আবেগের কাছে। শত চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু পারেননি। কুমার সাঙ্গাকারার চোখে জল! ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার বিদায়ী মুহূর্তটিতে পুরো শ্রীলঙ্কাই যেন হাজির ছিল কলম্বোর পি সারা ওভালে। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহেও চলে এসেছিলেন। গ্যালারিতে কিছু সময়ের জন্য হাজির ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষেও। টেস্ট ম্যাচ-পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাঙ্গাকারার হাতে তুলে দেওয়া হলো একের পর এক স্মারক। এরপর পুরো পি সারা ওভালে পিনপতন নীরবতা। উপস্থাপকের কোন প্রশ্ন নয়, নিজের ইচ্ছেমত বিদায় বেলায় কথা বলতে দেওয়া হলো সাঙ্গাকে। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সাঙ্গাকারা শুরু করলেন তাঁর বিদায়ী বক্তৃতা। সহজ-সরল ভাষায় দেওয়া এই বক্তৃতা দিতে গিয়ে কাঁদলেন তিনি, কাঁদালেন গোটা শ্রীলঙ্কাকে এমনকি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর সব ভক্তকুলকে। কিংবদন্তির এই বিদায় ভাষণটি হুবহু তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য- ‘১৫ বছর! ১৫ বছর ধরে অসাধারণ একটি দলের হয়ে খেলেছি। এ দলটির ড্রেসিং রুমের অংশ হওয়া গর্বের। ড্রেসিং রুমকে খুব মিস করবো। অনেক মানুষের সাথেই আমি জীবন কাটিয়েছি। অনেক ভক্ত, সমর্থক, বন্ধু-বান্ধব তৈরী হয়েছে। তবে সবার আগে যারা এখানে উপস্থিত রয়েছেন শুধু আমার জন্য, তাদেরকে ধন্যবাদ। এরপর ধন্যবাদ জানাবো আমার সতীর্থ এবং যাদের সাথে আমি ক্রিকেট শিখেছি তাদেরকে। এটা এমন এক স্কুল, যেখানে সব সময়ই যেতে মন চাইবে।
এখান থেকেই ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার মূল রসদ পেয়েছিলাম আমি। এরপর আমি ধন্যবাদ জানাবো আমার কোচদের। এখানে উপস্থিত রয়েছেন মি, সুনিল ফার্নান্দো। তিনি আমার প্রতিপক্ষ স্কুল থেকে এসেছিলেন। কিন্তু তিনিই ছিলেন আমার কোচিংয়ের জন্য যথেষ্ট। এছাড়া মি. উইজিসিংহে, যার বয়স এখন ৯০। আমার জন্য ছিলেন অনেক বড় অনুপ্রেরণা। এরপর ধন্যবাদ জানাবো আমার অতীত সব অধিনায়ক, আমার সব দলীয় সতীর্থদেরকে। যাদের সমর্থন, পরামর্শ এবং পরিচালনায় আমি এতদুর আসতে পেরেছি। আমি এদের সবাইকে উুঁচু মূল্য দিয়ে থাকি। ড্রেসিং রূমের প্রত্যেকটি মুহূর্ত আমি মিস করবো। এরপর ধন্যবাদ জানাবো চার্লি এবং সুধামি অস্টিনকে। আমাকে ম্যানেজ করা খুবই কঠিন ছিল। তবুও তোমরা ম্যানেজারের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করেছো। এছাড়া তাদেরকেও ধন্যবাদ, যারা তাদের প্রিয় সন্তানদের সামনে আমাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করে।অনেক মানুষই আমাকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে, কোথা থেকে আমি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি? আজ জবাব দেবো। সত্যি বলতে, আমি কখনওই আমার পিতা-মাতাকে পেছনে ফেলতে পারি না (কান্না ভাব, চোখে পানি)। আমি আমার পিতা-মাতাকে কখনওই কষ্ট দিতে চাই না। তবে, এটা অবশ্যই বলতে পারি তারাই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এর সঙ্গে যোগ করবো আমার ভাই-বোনদের (আবারও কান্না)। ধন্যবাদ আম্মা এবং আপাচিকে। তোমাদের কারণেই আমি নিজের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করতাম। আমি ধন্য যে, তোমাদের সন্তান এবং ভাই বোন হয়ে জন§াতে পেরেছি। আমি দুঃখিত যে আবেগতাি ড়ত হয়ে গেছি। তবে, এভাবে সবসময় তো আর হই না। তবে, এটা খুবই দুর্লভ সময় যে, আমার মা-বাবা এখানে আজ উপস্থিত রয়েছেন।’সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করে, জীবনে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন কী? এর জবাবে বলবো, অর্জন তো অনেক। শত শত। বিশ্বকাপ জয়ও রয়েছে এর মধ্যে। কিন্তু আমি তাকাবো শুধু ওই বক্সের দিকে। গত ৩০ বছরে যারা আমার বন্ধু হয়েছে। আজ তারা এখানে এসেছে আমার খেলা দেখতে। আমাকে বিদায় জানাতে। এই বিদায় বেলায়ও তারা আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমার পরিবারের সাথে বিদায় নিতে পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছেন। আমি হারি কিংবা জিতি- সব সময় সমর্থন জানিয়ে গেছেন। এটাই আসলে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।সবশেষে ধন্যবাদ জানাবো বিরাট (কোহলি) এবং ভারতীয় দলকে। কারণ, তারা এখানে অসাধারণ প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ ক্রিকেটকে নিয়ে এসেছিল। আমি অনেক টাফ ক্রিকেট খেলেছি। তবে তার মধ্যে এটাও ছিল একটা কঠিন, প্রতিদ্বন্দ¦ীতাপূর্ণ ক্রিকেট। তোমরা নিজেদেরকে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রমাণ করেছো। আমরা ভেবেছিলাম তোমাদের হারাবো। কিন্তু পারিনি। কখনও আমরা জিতেছি, কখনও হেরেছি। তবে, তার চেয়েও ক্রিকেটীয় প্রতিদ্ব›দ্বীতাটাকে তোমরা নিয়ে আসতে পেরেছো।’সর্বশেষ কথা বলবো অ্যাঙ্গি (ম্যাথিউজ) এবং আমার সতীর্থদেরকে। অ্যাঙ্গি, তুমি খুবই ভাগ্যবান যে, তোমার হাতে দুর্দান্ত, অসাধারণ একটি দল রয়েছে। তোমারও ভবিষ্যৎও খুব উজ্জ্বল দেখতে পাচ্ছি। শুধু প্রয়োজন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা। কখনও হেরে গেলে ভয় পেয়ো না। ভেবো, জয়ের জন্য ওটা খুবই প্রয়োজন ছিল।’
শেয়ার করুন