'স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেছে'
আল থুমামা স্টেডিয়ামে তখন জনসমুদ্রের গর্জন। ইতিহাস গড়ার আনন্দে বুনো উল্লাসে মেতেছেন বোনো-হাকিমিরা। এই আনন্দ কেমন করে সহ্য করবেন তিনি! তাই তো চোখেমুখে ইস্পাতের কাঠিন্য নিয়ে হন হন করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তখন কোনো সতীর্থও ছিলেন না। তাঁকে একা দেখে ফিফার এক কর্মী সঙ্গী হন। প্রতিপক্ষের দু-একজন সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন বটে। টানেলে ঢোকার পর আর বাঁধ মানল না। চোখ ফেটে অঝোর ধারায় এলো জল। এই রোনালদোকে আগে কখনও দেখেনি বিশ্ব। এভাবেই চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন তিনি।
বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া নিয়ে গতকাল মুখ খোলেন রোনালদো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন তিনি, 'পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ও উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন ছিল। পর্তুগালকে আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতানোর পাশাপাশি অনেক শিরোপা জিতেছি। কিন্তু বিশ্বের মধ্যে আমার দেশের নাম সবার উপরে রাখা ছিল আমার স্বপ্ন। এজন্য লড়াই করেছি, কঠোর পরিশ্রম করেছি। ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে পাঁচটি বিশ্বকাপে স্কোর করেছি। লাখ লাখ পর্তুগিজের সমর্থনে আমি আমার সব দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কখনও লড়াই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিইনি, কখনও সেই স্বপ্ন থেকে হাল ছাড়িনি। দুঃখজনকভাবে গতকাল সে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এর প্রতিক্রিয়া জানানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি শুধু আপনাদের সবাইকে জানাতে চাই, অনেক কিছু বলা হয়েছে, অনেক কিছু লেখা হয়েছে, অনেক কিছু অনুমান করা হয়েছে। কিন্তু পর্তুগালের জন্য আমার নিবেদন এক মুহূর্তের জন্যও পরিবর্তিত হয়নি। ধন্যবাদ পর্তুগাল, ধন্যবাদ কাতার। টিকে থাকা পর্যন্ত স্বপ্নটা সুন্দর ছিল।' যার মানে, আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর না নিলেও বিশ্বকাপে আর খেলবেন না তিনি।
বিশ্বকাপে রোনালদো এসেছিলেন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সময় পেছনে ফেলে। কাতার আসার সপ্তাহখানেক আগে বিতর্কিত এক সাক্ষাৎকারের কারণে ক্লাব তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। যদিও এসব বিতর্ক তাঁকে স্পর্শই করতে পারেনি। সবকিছু পেছনে ফেলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ জয়ের শেষ চেষ্টায় নেমেছিলেন। এবারের দলটাও ভালো ছিল বলে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু যেই সোনালি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরার জন্য এত দিন ধরে ছুটছেন, সেটা অধরাই রয়ে গেল। ৩৭ বছর বয়সী এ তারকার এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তাই স্বপ্নের কাপটা আর কোনো দিন হাতে তোলা হবে না। শুধু কী কেবল বিশ্বকাপ ছুঁতে না পারার যন্ত্রণা? ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে দলও যে তাঁর সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। গত তিনটি বিশ্বকাপে তিনি একা টেনেছেন পর্তুগালকে। অথচ এবার নকআউটের দুই ম্যাচে শুরুর একাদশেই তাঁর জায়গা হয়নি! ইতিহাসের অন্যতম সেরাকে সাইডবেঞ্চে বসিয়ে দিলেন কোচ! যদিও রোনালদোকে পরে নামানোয় কোনো অনুশোচনা নেই পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের, 'আমার মনে হয় না রোনালদোকে শুরু থেকে খেলালে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতো। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এই দলটাই দারুণ ফুটবল খেলেছে। রোনালদো একজন দুর্দান্ত ফুটবলার। সে তখনই মাঠে নেমেছে, যখন আমরা তাঁর প্রয়োজন অনুভব করেছি। এ নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই।' বিশ্বমঞ্চে আরও একটি ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়েছেন রোনালদো। ম্যানইউর সঙ্গে বিচ্ছেদে এখন তিনি ক্লাবহীনও। এমন বিধ্বস্ত হৃদয় নিয়েই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে হবে তাঁকে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন