বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সতর্কবার্তা
প্রস্তুতি ম্যাচে প্রস্তুতিটাই আসল। সেখানে
যুদ্ধ-যুদ্ধ সাজ খোঁজা অর্থহীন। তবু কাল
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের
ম্যাচে অদৃশ্য রণসজ্জার মোড়ক ছিল অন্তত
দুটি দ্বৈরথে। নিজের সঙ্গে মাশরাফি বিন
মর্তুজার এবং সতীর্থ ওপেনারের সঙ্গে
ইমরুল কায়েসের। জিম্বাবুয়ের কাছে
স্বাগতিকরা ম্যাচটি ৭ উইকেটে হেরে
গেছে বটে। তবে নিজেদের যুদ্ধে জেতার
কারণে হেরে যাওয়া ম্যাচের সবচেয়ে বড়
বিজয়ী ওই দুজন। মাশরাফি ও ইমরুল।
বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি
অধিনায়ক খেলার মধ্যে নেই অনেক দিন।
ডেঙ্গুজ্বরের কারণে মাশরাফিকে
হাসপাতালে কাটিয়ে আসতে হয়েছে
সপ্তাহখানেক। এরপর আরো সপ্তাহ তিনেক
কাটলেও সেই ধকল কাটেনি এখনো।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের আবহে তাই
কালকের এলেবেলে ম্যাচটিও মাশরাফির
জন্য হয়ে ওঠে প্রায় অগ্নিপরীক্ষার শামিল।
তাতে লেটার মার্কস হয়তো পাননি, তবে
উতরে গেছেন ভালোভাবে। বল করেছেন দুটি
স্পেলে। প্রথম স্পেলে চার ওভারে ১৬ রান
দিয়ে উইকেটশূন্য। অমন আগুনঝরা বোলিং নয়
সত্যি। তবে এর মধ্যেও ছিল একটি মেডেন
ওভার; তৈরি হয় উইকেট পাওয়ার মতো একটি
হাফচান্সও। আর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তিন
ওভারে দেন আরো ১৫ রান। সব মিলিয়ে
মাশরাফির ৭-১-৩১-০ বোলিং ফিগার টিম
ম্যানেজমেন্টের কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজ
মুছে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। অন্তত ওয়ানডে
সিরিজে অধিনায়কের খেলা নিয়ে ন্যূনতম
সংশয়টাও আর থাকল না যে!
সৌম্য সরকারকে নিয়ে সে সংশয় তৈরি হয়
আগের দিন। আর আশঙ্কা সত্যি করে কাল
নিশ্চিত জানিয়ে দেওয়া হয়, জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে খেলছেন না ডাকাবুকো ওই
ওপেনার। তাতেই জাতীয় দলে
প্রত্যাবর্তনের দরজা চলে আসে ইমরুল ও
এনামুল হকের সামনে। কাল সকালে বিসিবি
একাদশের হয়ে ওপেন করতে নামেন ওই
দুজনই। সেখানে লড়াইটা হয়েছে সমানে
সমান। ৬৪ বলে ৫৬ রান ইমরুলের; এনামুলের ৬১
বলে ৫২। তবে কোচ-অধিনায়কের পছন্দে
এগিয়ে থাকায় এবং এ বছরের দুর্দান্ত টেস্ট
ফর্মের কারণে শেষ পর্যন্ত দরজা ঠেলে
ভেতরে ঢোকার প্রবেশাধিকার পান ইমরুল।
সৌম্যর বদলি হিসেবে প্রথম দুই ওয়ানডের
ঘোষিত দলে যোগ করা হয় যে অভিজ্ঞ এই
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকেই!
কালকের ম্যাচের দুই ইনিংসের শুরুতেই ছিল
ওই দুটি দ্বৈরথ। তাতে জয়ী মাশরাফি ও
ইমরুল। আর দুই দলের যুদ্ধে অনায়াস বিজয়ী
জিম্বাবুয়ে। প্রস্তুতি ম্যাচে জয়-হারের
গুরুত্ব সামান্য- বহু চর্চিত এই কথার চর্চা
কাল ফতুল্লায় স্বাগতিকদের ড্রেসিংরুমে
হয়েছে নিশ্চিতভাবে। জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে সিরিজের আগেও থাকবে সেই সুর।
তবে কাল জিম্বাবুয়ের কাছে ৭ উইকেটের
হারের পর পাগলাঘণ্টি না বাজলেও
সতর্কঘণ্টা নিঃসন্দেহে বাজবে বাংলাদেশ
ক্যাম্পে। মাশরাফি-মুশফিক-সাব্বির-লিটন-
ইমরুল-এনামুলদের নিয়ে গঠিত বিসিবি
একাদশকে এমন অনায়াসে যখন হারিয়ে দেয়
জিম্বাবুয়ে, তখন একটু সতর্ক হতে হয় বৈকি!
অথচ শুরুটা কী দুর্দান্তই না ছিল! ইমরুল-
এনামুলের নিজেদের ভেতর লড়াইয়ে বিনা
উইকেটে শতরান পেরিয়ে যায় বিসিবি
একাদশ। কিন্তু ফিফটি পেরোনোর পর
দুজনের কেউ টেকেননি বেশিক্ষণ। লিটন
দাশ এসে দারুণ দুটি ছক্কা মারলেও ইনিংস
টানতে পারেননি বেশি দূর। তাঁর ২৫ রানের
পর সাব্বির রহমান আউট ৩ রানে। এরপর
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ছয় নম্বরে নামা
শাহরিয়ার নাফীসের ৯০ রানের জুটি।
গ্যালারিতে থাকা পাঁচ-সাত হাজার
দর্শককে দারুণ বিনোদন জুগিয়েছেন তাঁরা।
অনেক দিন পর জাতীয় দলে ঢোকার সুযোগ
তৈরি করা শাহরিয়ার করেছেন ৩৮ বলে ৩৮।
এলটন চিগুম্বুরাকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে
আসা তাঁর স্ট্রেইট ছক্কাটি ছিল দিনের
অন্যতম সেরা শট। শাহরিয়ার আউট হলেও ৮৪
বলে ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন
মুশফিক। তাতে ৮ উইকেট ২৭৭ রানের স্কোরে
পৌঁছায় স্বাগতিকরা।
সেই স্কোরকে মামুলি বানিয়ে দেন
জিম্বাবুয়ের মিডল অর্ডার। ৫১ রানে দুই
উইকেট হারানোর পর ক্রেইগ আরভিন (৯৫),
শন উইলিয়ামস (৫৪) ও এলটন চিগুম্বুরার (৬৪*)
ব্যাটে ভর করে ২০ বল এবং ৭ উইকেট হাতে
রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর তাদের।
আফগানিস্তানের কাছে সদ্যই সিরিজ হেরে
আসা দলটির কাছে সেটি নিঃসন্দেহে
অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
আর বাংলাদেশের প্রেরণা? প্রস্তুতি
ম্যাচে যে প্রস্তুতিটাই আসল- জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে নিরঙ্কুশ আধিপত্যে সিরিজ জিতে
সেটি প্রমাণ করা।
শেয়ার করুন