সুপার টেনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হার দিয়ে
পাকিস্তানের দেয়া ২০১ রানের জবাবে ৬ উইকেটে ১৪৬ রান করে বাংলাদেশ। ৫৫ রানের হার দিয়ে সুপার টেনে যাত্রা শুরু করলেও টাইগার সমর্থকদের জন্য সুখবর যে রানে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। অল্প হলেও রান পেয়েছেন মুশফিকুর রহিমও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের বিপক্ষে সুপার টেনে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের দলপতি শহীদ আফ্রিদি। ব্যাটিংয়ে নেমে আহমেদ শেহজাদ, মোহাম্মদ হাফিজ আর শহীদ আফ্রিদির ব্যাটে ভর করে পাকিস্তান ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ২০২ রান।
রানের পাহাড়ে চড়তে গিয়ে প্রথমেই উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। মোহাম্মদ আমেরের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে আসেন সৌম্য সরকার। আমেরের প্রথম বলে একরান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন তামিম। দ্বিতীয় বলে রান নিতে পারেননি সৌম্য। পরের ইনসুইং ডেলিভারটি বুঝতে পারেননি সৌম্য। আমেরর বল সৌম্যের স্টাম্প উপড়ে ফেললে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর পাক বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালান তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান। ৩২ বলে এই জুটি সংগ্রহ করে ৪৩ রান। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে আফ্রিদিকে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান তামিম। সেই ওভারের চতুর্থ বলে আফ্রিদির বলে চার মারেন সাব্বির। তবে পরের বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে আসেন এই ব্যাটসম্যান। আফ্রিদির গুগলি বুঝে উঠতে পারেননি সাব্বির। দলের রান তখন ৪৪।
বাছাইপবের্র ফর্ম এই ম্যাচেও ধরে রাখেন তামিম ইকবাল। আমের-ইরফানদের বিপক্ষে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখা গিয়েছে এই ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ১২ বলে তামিম সংগ্রহ করেন মাত্র ৮ রান। তবে পঞ্চম ওভারে আফ্রিদিকে ছয় মেরে শুরুটা করেন তামিম। দ্রুতই পৌছে যান ২৪ রানে। তবে সেই আফ্রিদির বলেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন তামিম। তামিম আউট হবার পর এই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোটা বাংলাদেশের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে যায়।
দলের বিপদ আরো বাড়িয়ে দিয়ে দলীয় ৭১ রানে ইমাদ ওয়াসিমের বলে শেরজিল খানকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর ১৮ রান আউট হয়ে ফিরে আসেন মুশফিকুর রহিম। তবে মাশরাফির মুখে খানিকটা হাসি ফিরে এসেছে কারণ রানে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিক। শুরুতে রানের জন্য লড়াই করলেও শেষ ওভারে এসে অর্থশতক পূর্ণ করেন সাকিব। ৫ চার ও একটি ছয়ে ৪০ বলে ৫০ রান করেন সাকিব।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সবোর্চ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ আমের ও শহীদ আফ্রিদি।
এর আগে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বুধবার আহমেদ শেহজাদ, মোহাম্মদ হাফিজ ও শহীদ আফ্রিদির ১৯ বলে ৪৯ রানে ভর করে স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেটে ২০১ রান তুলে পাকিস্তান। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরটা ভালো হয়েছিল পাকিস্তানের। তাসকিনের করা প্রথম ওভারে ৫ রান নেন শেহজাদ। পরে আল-আমিনের ওভারে দুটি ছয় ও একটি চার মেরে ভালো খেলার ইঙ্গিত দেন শেরজিল খান। তবে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই শেরজিলকে বোল্ড করেন আরাফাত সানি।
এরপরই মোহাম্মদ হাফিজ ও আহমেদ শেহজাদ পাকিস্তানের স্কোরটাকে এগিয়ে নেয়ে যেতে থাকেন। দলীয় ২৬ রানে মেরজিন আউট হলেও এই জুটিতে বড় রানের স্বপ্ন দেখে পাকিস্তান। ৬ ওভারেই দলীয় রান পঞ্চাশের কোটা পার করান এই দুই ব্যাটসম্যান। সাকিব-মাশরাফিরা আপ্রাণ চেষ্টা করলেও জুটিটা ভাঙতে পারেনি। এরইমধ্যে ১৩তম ওভারে অর্ধশতক পূর্ণ করেন শেহাজাদ। ৩৫ বলে ৭টি চারের সাহায্যে অর্ধশত রান করেন পাকিস্তানি এই ওপেনার। অথচ এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে দলেই জায়গা পাননি তিনি। পাকিস্তান ক্রিকেট লিগে অসাধারণ পারফর্ম করে দলে ফিরে আসেন শেহজাদ।
তবে এর পরের ওভারেই আউট হন শেহজাদ। সাব্বিরের বলে উড়িয়ে মারতে গেলে লং লেগে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন এই ওপেনার। ৫২ রান করেন তিনি। তবে অপরপ্রান্তে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ হাফিজ। মাশরাফির করা ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এক রান নিয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এই অলরাউন্ডার। ৩৬ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় পঞ্চাশ রানের কোটা পার করেন তিনি।
শেহজাদ আউট হওয়ার পরই উইকেটে আসেন পাকিস্তানের অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি। আর এসেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেন তিনি। আফ্রিদি-হাফিজ জুটি মাত্র ১৭ বলে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৪২ রান। এরপর সৌম্য সরকারের অসাধারণ ক্যাচে আউট হন মোহাম্মদ হাফিজ। আরাফাত সানির বলে বেশ জোরের ওপর মেরেছিলেন হাফিজ। লং লেগে বাতাসে ভেসে বলটি ধরেন সৌম্য। তবে সেই প্রচেষ্টায় বল ধরে রাখতে পারেননি। কারণ শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় বলটিকে বাতাসে ভাসিয়ে নিজে দড়ির অপরপ্রান্তে গিয়ে আবার মাঠের ভেতর ঢোকেন এবং ক্যাচটি লুফে নেন সৌম্য।
তবে বাংলাদেশের বোলাররা আটকাতে পারেননি আফ্রিদিকে। একের পর এক চার ছয় মেরে সাকিব-সানিদের অসহায় করে তোলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। তবে হাফ সেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে আউট হন 'বুমবুম'। তাসকিনের বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি।
বাংলাদেশ : মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, আল-আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল ও তাসকিন আহমেদ।
পাকিস্তান : শহিদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), আহমেদ শেহজাদ, ইমাদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ ইরফান, মোহাম্মদ সামি, সরফরাজ আহমেদ, শারজিল খান, শোয়েব মালিক, উমর আকমল ও ওয়াহাব রিয়াজ।
শেয়ার করুন