ব্যাংকের ভেতরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, করছিলেন বমি
বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়া কাপ (অনূর্ধ্ব-২১) হকিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে
সিংগাপুরে বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়া কাপ (অনূর্ধ্ব-২১) হকিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, ছেলেদের দল বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দেশের ক্রিকেট যখন ভঙ্গুর অবস্থায় তখন বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা হকিতে সাফল্য উপহার দিয়েছে। অথচ এই দলের কোচদের বেতন বোনাস নেই। ঈদে তারা কিছুই পাননি।
সোমবার ঢাকায় ফিরেছেন খেলোয়াড়রা বিমানবন্দরে চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়দের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তোমরা দুপুরে কী খাবে বলো। প্রশ্নকারী কর্মকর্তা মনে করেছিলেন কোনো পাঁচ তারকা হোটেলের নাম বলবে। তাকে চমকে দিয়ে খেলোয়াড়রা বলেছেন ‘আমরা বিরিয়ানি খাব।’ এই জবাবে হকির সেই কর্মকর্তা হতভম্ব। খেলোয়াড়দের চাওয়া কত কম। চার দিন হয়ে গেছে সিংগাপুর থেকে ফিরেছেন ছেলেমেয়েরা এখন পর্যন্ত তাদেরকে ডেকে আগামীর পরিকল্পনার কথা জানানোর উদ্যোগ নেই।
সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে হকির সাফল্যের কথা এবং হকিটাকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়—তা নিয়ে কথা বলার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু সেখানেই শেষ। হকি ফেডারেশন কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব। ফেডারেশনের স্টাফদের বেতনই বকেয়া পড়ে রয়েছে। ঈদে স্টাফরা নাকি বেতনই পাননি। ১০ দিন পর এখন বেতন পাবেন, আশায় আছেন তারা।
সিংগাপুরে চ্যাম্পিয়ন ছেলেদের দলটাকে আগামী এশিয়ান গেমসের জন্য তৈরি করতে চান জার্মান কোচ গেহার্ড পিটার। বর্তমান দলটাকে আগামী মাসে তাইওয়ানে পাঠিয়ে পাঁচ জাতির টুর্নামেন্টে খেলাতে চান। আমন্ত্রণ এসেছে বাংলাদেশে হকি ফেডারেশনে। কিন্তু দল পাঠানোর কোনো প্রক্রিয়াই শুরু করতে পারেনি ফেডারেশন। কবে অনুশীলন, কাকে কোচ করা হবে, কী পরিকল্পনা, তার কিছুই জানা নেই ফেডারেশনের। অনূর্ধ্ব-২১ ছেলেদের হকি দলটাকে ইউরোপে নেওয়ার চিন্তা করছেন পিটার। ছয় মাসের জন্য সেখানে যাবে। জার্মানির ক্লাবে খেলবে, পরিশ্রমিক পাবেন, আবাসন, খাওয়া, ট্রান্সপোর্ট পাবেন। কত সুযোগ-সুবিধা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ইউরোপে খেলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মান বাড়বে। ওখানকার ক্লাবে খেলবেন, সপ্তাহের ফাঁকে ফাঁকে গেহার্ড পিটারের অধীনে অনুশীলন করবেন। পিটারই সব উদ্যোগ নিচ্ছেন। পিটার জার্মানি থেকে যোগাযোগ করছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনে, কিন্তু ফেডারেশন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
জাতীয় হকির কোনো খবর নেই। হচ্ছে না জাতীয় যুব হকি। ক্লাব হকি খেলেই ফেডারেশন তার দায়িত্ব পালন করছে। দেশের কোথায় হকি হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে না, কী সমস্যা। সেসব দেখার জন্য বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। কর্মকর্তারা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। আর্থিক সংকট ফেডারেশনে। সিংগাপুরে এএইচএফ কাপ হকিতে ছেলেও মেয়েদের খেলতে গিয়েছিল, ধারদেনা করে। বিমান টিকিটের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেনি ফেডারেশন। সিংগাপুরে খেলোয়াড়দের বহনকারী বাস হোটেলে আসতে চায়নি, বাসের ভাড়া বকেয়া ছিল বলে, ফেডারেশন সূত্রের খবর। শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়রা সিঙ্গাপুরে আবাসন কষ্টে ভুগেছে। এক রুমে ছয় সাতজনকে থাকতে হয়েছে গাদাগাদি করে। অনেকেরই ঘুম হয়নি। খাওয়া-দাওয়া সেভাবে করতে পারেনি। মেয়েদের দল, ছেলেদের দেল গিয়েছিল। বিদেশের মাটিতে এতোগুলো খেলোয়াড় এক সঙ্গে গেলে তাদের প্রতি কি ধরনের যুত্ন নিতে হয় সেটা হকি ফেডারেশন বুঝতে পারেনি। তারপরও এই সব খেলোয়াড়ের কোনো অভিযোগ নেই। দেশের জন্য খেলতে গিয়ে কষ্ট করেছে। দেশকে ট্রফি দিয়েছেন ছেলেরা, আর মেয়েরা স্বাধীনতার পর প্রথম জুনিয়র এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অজর্ন করে বাছাই টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়ে ফিরেছে।
সিংগাপুরে খেলতে যাওয়া খেলোয়াড়দের হাতে দেওয়া হয়নি কোনো পকেট খরচ। একজন কোচ তার পকেটের টাকা খরচ করে খেলার ফাঁকে খেলোয়াড়দেরকে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে টাকা পাঠনোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব এহসান রানা।
নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের হকি নিয়ে কথা বলতে গেলে কর্তাদের পাওয়া কঠিন। ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব এহসান রানা জানিয়েছেন সমস্যা আছে থাকবে। এখান থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে ফেডারেশনকে। সংগঠকদের কাজই হচ্ছে সংগঠিত করা। সংগঠনটা সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা। সমালোচনা করার বিষয় না। আমি তো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নয়। আমার চেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তারা রয়েছেন। আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’ নানা সমস্যায় জর্জরিত হকি ফেডারেশন। অর্থ নেই, স্পন্সর নেই, অর্থ সংগ্রহেরও কোনো উদ্যোগ নেই। প্রথম বার ফ্রাঞ্চাইজি হকির আয়োজন করে লাভের গুড় পিঁপড়া খেয়ে ফেলায় উলটো দেনা হয়েছে। ফেডারেশনের অভ্যন্তরে রয়েছে নানা মত, কেউ কাজই করবে না। আবার কেউ কাজ করলে সেটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লোকের অভাব নেই। এভাবেই পরিকল্পনাহীন চলছে দেশের হকি। নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের হকি নিয়ে কথা বলতে গেলে কর্তাদের পাওয়া কঠিন।
ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব এহসান রানা জানিয়েছেন সমস্যা আছে থাকবে। এখান থেকে উত্তরনের পথ বের করতে হবে ফেডারেশনকে। সংগঠকদের কাজই হচ্ছে সংগঠিত করা। সংগঠনটা সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা। সমালোচনা করার বিষয় না।’ মাহবুবুল এহসান রানা দেশের জাতীয় হকি দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড়। ২০০৯ সালে খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, নানা অভিমান ছিল। আরো কয়েক বছর বন্ধুরা জাতীয় দলে খেলেছেন। আর সংগঠক হিসাবে কাজ করে দেশের হকিটাকে উন্নতির চিন্তায় ছিলেন রানা। মাঝে দুরে সরে গিয়েছিলেন। এখন আবার হকিতে দায়িত্ব পালন করছেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন