সুনামগঞ্জের মানুষ এখনও আমাকে ভুল বোঝে: নাসুম আহমেদ
নাসুম আহমেদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটে। কিন্তু অনেকে বলেন তিনি সুনামগঞ্জের সন্তান। বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি। দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ও উঠে এসেছে। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন রায়হানুল সৈকত।
প্রশ্ন: মিরপুর ও সিলেটের উইকেট কেমন দেখেছেন?
ADVERTISEMENT
Amazing Cool GadgetsAmazing Cool Gadgets
নাসুম: দুইটা দুই রকম। কিন্তু এবারের উইকেটটা একই মনে হচ্ছে। ১৯-২০ হতে পারে (কিছুটা আলাদা) এই আর কি। ব্যাটিং বান্ধব উইকেট, বোলাররা তেমন সুবিধা করতে পারছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা অনুশীলন করছি খুব ভালোই হচ্ছে। প্রথম থেকে আমাদের খুব ভালো হয়েছিল, মাঝে কয়েকটা ম্যাচে খারাপ সময় গেছে। আশা করি সামনের ম্যাচগুলোতে দল ঘুরে দাঁড়াবে।
প্রশ্ন: আপনি সিলেটের ক্রিকেটার। লাক্কাতুরায় সিলেটের বিপক্ষে ভিন্ন দলের হয়ে খেলেন, অনুভূতি কেমন?
নাসুম: সকলের একটাই মন্তব্য আমি কেন সিলেটের হয়ে খেলি না। চার বছর ধরে ওরা (সিলেট) আমাকে নিতেই পারছে না, তাহলে আমি কী করব। এটা তো আমার দোষ না।
প্রশ্ন: প্রতিপক্ষ যখন সিলেট থাকে, তখন খেলতে কেমন লাগে?
নাসুম: এর আগে সিলেটের বিপক্ষে যতগুলো ম্যাচ খেলেছি, এর মধ্যে কয়েকটা ম্যাচ হেরেছি, বাকি সবগুলো জিতেছি। আমি সব সময় ওদেরকে হারাতে চাই।
প্রশ্ন: সিলেটের দর্শকদের সমর্থন পান?
নাসুম: না, তারা সব সময় আমার বিপক্ষে থাকে। এজন্য আমার আরও বেশি জেদ থাকে ওদের হারানোর। তবে হ্যাঁ, সিলেটের হয়ে আমার খেলার ইচ্ছা আছে। খুলনায় সরাসরি চুক্তি হয়েছে, চিটাগংয়েও একবার সরাসরি চুক্তি হয়েছে। আমি তো ড্রাফটে ছিলাম সেখান থেকে নিতে পারছে না, সরাসরি কথা বলেও নিতে পারছে না। আমি আমার সিলেটের বিপক্ষে কখনও হারতে চাই না। আবার আমি যদি কখনও সিলেটের হয়ে খেলি, তখন চাইব সবাইকে হারিয়ে দিতে। এখন যেহেতু আমি খুলনার দলে, সেহেতু সবকিছু খুলনার জন্যই করবো।
প্রশ্ন: ক্রিকেট যাত্রা শুরু হলো কীভাবে?
নাসুম: আমার জন্ম সিলেটের লামা বাজারে। আর বড় হয়েছি জালালাবাদে। ওখানকার একটা মাঠে খেলছিলাম, হাউস স্টেটের সঙ্গে একটা ম্যাচ ছিল। ঐ দিন শুক্রবার ছিল। শেহনাজ নামে একটা ছেলে আমাদের উইকেটকিপার ছিল। সে বলল নাসুম জেলা স্টেডিয়ামে যাবা? ওখানে অনূর্ধ্ব-১৩ দলের বাছাই চলছে। আমি বললাম, না ভাই, আমার খেলা আছে, আমি যেতে পারবো না। জুমার নামাজ শেষে হঠাৎ কী মনে হলো তারপরে গেলাম। জেলা স্টেডিয়ামের সামনে গেলাম, আধাঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। দেখলাম সবাই ফুটবল খেলছে, ২৫ জনের স্কোয়াডও হয়ে গেছে। তারপরে ভেতরে যখন গেলাম সেখানে মারুফ হাসান নামে একজন ছিলেন, তিনি এখন ইংল্যান্ডে আছেন। উনি আমাকে বল দিয়ে বললেন রান আপ নিয়ে একটু বোলিং করতে। আমি বোলিং করলাম, এর দুই দিন পরে আমাকে ব্যাটিং করতে দিলেন। কংক্রিটের উইকেট ছিল তো, ব্যাটে বল লাগলে দেখি মজা লাগে। আমিও মজা নিয়ে ব্যাটিং করছিলাম। তারপরে কোচেরও পছন্দ হলো। চূড়ান্তভাবে আমি জায়গা পেয়ে গেলাম অনূর্ধ্ব-১৩ দলে। সেখান থেকে যাত্রা শুরু হলো, এরপর আস্তে আস্তে ওপরে উঠে আসা।
প্রশ্ন: জন্মস্থান সিলেট নাকি সুনামগঞ্জ?
নাসুম: আমার দাদাবাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। অনেকে বলে আমার ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছে সেখান থেকে। কিন্তু আমার জন্ম এখানে (সিলেট), আমার বাবারও জন্ম এখানে। আমাদের সবকিছুই এখানে। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৩ দলের হয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল সিলেট থেকেই। সুনামগঞ্জের মানুষ এটা নিয়ে অনেক ভুল বুঝে, তারা মনে করে আমি আমার পিতৃস্থান সুনামগঞ্জ ছেড়ে এখানে খেলি। এটা আসলে বোঝার ভুল। বিষয়টি নিয়ে এর আগে আমি কথা বলেছিলাম। কিন্তু সুনামগঞ্জের অনেকে মনে করেছে, আমি তাদের বিপক্ষে কথা বলেছি। আমি সেখানকার মানুষের বিপক্ষে বলিনি। কিন্তু ওরা আমাকে ভুল বুঝেছে, সুনামগঞ্জের মানুষ এখনো আমাকে ভুল বোঝে। আমি অস্বীকার করি না যে ওখানে আমার দাদাবাড়ি ছিল না।
প্রশ্ন: এই ভুল বোঝাবুঝির শুরুটা কীভাবে হলো?
নাসুম: আমি যখন ক্রিকেট শুরু করেছি তখন সুনামগঞ্জে কোনো ক্রিকেটই ছিল না। আমি অনূর্ধ্ব-১৪ যখন খেলেছি, তখন তারা শুরু করেছে। তখন কেউ বলেনি যে এটা আমাদের খেলোয়াড় আমাদের দিয়ে দাও। ওখানকার একটা দল ছিল প্যারামাউন্ট, তারা যখন আমাকে ভাড়া করে খেলতে নিয়ে গেছে তখন খেলেছি। তখন তো আমি কেউ ছিলাম না। তারা জেলা দলে খেলার কথা বলেছিল, কিন্তু আমি তো ওখানকার কেউ না। তখন আমি তাদের জানিয়েছিলাম আমি এটা করতে পারবো না। কারণ আমি সিলেট জেলা দলে খেলি। ২০১০ সালে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে আমার অভিষেক হয়েছে সিলেট বিভাগীয় দলে। ওখানকার জেলা ক্রিকেটের একজন মন্তব্য করেছিল, আমি সুনামগঞ্জের সন্তান হয়েও ওখানে খেলছি না, তখন থেকেই ঝামেলার শুরু। তবে আমি কখনো সুনামগঞ্জের মানুষের বিপক্ষে যাইনি। আমি সেখানকার কোনো অ্যাকাডেমির স্টুডেন্ট ছিলাম না, সেখানকার কোনো বয়সভিত্তিক দলেও খেলিনি, কেবল একটা লিগ খেলেছি।
প্রশ্ন: কিছুদিন আগে বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ খেলার সময় জাকের আলী অনিকের সঙ্গে আপনার স্থানীয় ভাষায় কথা হচ্ছিল, সতীর্থরা কী আপনাদের কথা বুঝতে পেরেছিলেন?
নাসুম: শারজায় দ্বিতীয় ম্যাচে জাকের সিলেটি ভাষায় বলছিল, ভাই তুমি তোমার জায়গায় বল করো, ফিল্ডিং নিয়ে চিন্তা কইরো না। আমরা বেশির ভাগ সময় প্রচলিত ভাষায় কথা বললেও যখন নিজেরা থাকি, তখন আমাদের ভাষাতেই কথা বলি। তখন ডান-বাম থেকে বলে তোরা একটু বাংলায় কথা বল, আমরা বুঝতে পারি না। সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমরা এগুলো ভীষণ উপভোগ করি। আর আমরা তিন-চার জন যখন একসঙ্গে হয়ে যাই, তখন নিজেদের মতো করে গল্প করতে একটু বেশি পছন্দ করি। এ কারণে আমাদের বিভাগীয় দলের মধ্যে বোঝাপড়া অনেক ভালো।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন