সোনার হরিণ হয়ে যাওয়া পারিশ্রমিক ধরা দিচ্ছে না
'দিন যায়, কথা থাকে / সে যে কথা দিয়ে রাখল না/ ভুলে যাবার আগে ভাবল না।' সুবীর নন্দীর কণ্ঠে এই গান শোনেননি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। এবারের বিপিএলে এই গানের কথা ঘুরেফিরে আসছে দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের মনে। দলটির বিদেশি তারকারা হয়তো জানেন না কালজয়ী এই গান সম্পর্কে, কিন্তু তারা নিজেদের ভাষায় ঠিকই এমন গান খুঁজে নিচ্ছেন।
এই মুহূর্তে রাজশাহীর যে অবস্থা তাতে গান না গেয়ে উপায় কী! মাঠে জ্বলে উঠছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু মাঠে নামার আগে ও পরে নিয়ম করে চলছে পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতা।
দলটির কেউ বলেন, এই তো টাকা পেয়ে যাচ্ছি, কেউ বলেন, পেলাম না। আবার কেউ বলছেন, কথা দিয়ে মালিক কথা রাখছে না। দুই বার হাতে পারিশ্রমিকের চেকও বুঝে পেয়েছেন ক্রিকেটাররা।
কিন্তু সোনার হরিণ হয়ে যাওয়া পারিশ্রমিক ধরা দিচ্ছে না। তাতে হোটেলে বসে বেকার সময় অতিবাহিত করছেন ক্রিকেটাররা। সঙ্গে রয়েছে টাকা না পাওয়া নিয়ে চিন্তা। কতদিন এভাবে হোটেলে বসে থাকবেন তারা? উত্তরও মিলেছে, খুলনা টাইগার্স কোনো ম্যাচে হারলেই শেষ চার সংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত হয়ে যাবে রাজশাহীর। তাতে পারিশ্রমিক নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি ফ্রাঞ্চাইজিটির ক্রিকেটাররা অপেক্ষা করছেন খুলনার একটি হারের।
তবে খুলনা তাদের শেষ দুটি ম্যাচেই জয় তুলে নিলে চিন্তা বাড়বে রাজশাহীর। শেষ চারে যেতে হলে চিটাগংয়ের তিন হার কামনা করতে হবে তাদের। সেটিও তাদের পক্ষে না গেলে চিন্তা আরও বাড়বে। তখন সেটি চিন্তা থেকে রূপ নিবে দুশ্চিন্তায়। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় হওয়ার পরে টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা বাড়বে আরো। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না ক্রিকেটাররা। বারবার টাকা দেওয়ার কথা বলে কেন দেওয়া হচ্ছে না, চেক কেন বাউন্স করছে, সেসব নিয়ে গতকাল রাতে আলোচনায় বসেছিলেন দুর্বার রাজশাহীর সকলে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলোচনা চলছিল। আলোচনার আগে কয়েক জন ক্রিকেটার জানিয়েছেন, পারিশ্রমিক না পেলে তারা আর খেলবেন না।
গতকাল দুপুরে বিসিবিতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন দুর্বার রাজশাহীর ম্যানেজার মেহেরাব হোসেন অপি। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে
চলার চেষ্টা করছেন, কারো ফোনও ধরছেন না, কেটে দিচ্ছেন। কিন্তু বিসিবিতে যে পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, তাতে কথা না বলে উপায় ছিল না। জানিয়েছেন, ক্রিকেটাররা টাকা পেলেও তিনি এক টাকাও পাননি। তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দলটির পারিশ্রমিক জটিলতার প্রকট আকার। তবে অপি বলেছেন, 'আমি কিন্তু কোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এই অভিযোগটা অফিশিয়ালি পাইনি। কেউ আমাকে বলেনি। আমি যেহেতু জিনিসটা জানি না, তাই আমি এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।' নিজের পারিশ্রমিক নিয়ে বলেছেন, 'আমি এখনও পাইনি। তবে খেলোয়াড়রা পেয়েছে। প্রথমে যে ২৫ শতাংশ দেওয়ার কথা ছিল, সেটা তারা পেয়েছে। এরপরে ২৫ শতাংশের চেক দেওয়া হয়েছে।'
চট্টগ্রামেও দেওয়া হয়েছিল চেক, কিন্তু সেটি বাউন্স হয়েছিল। টাকা না পেয়ে ক্রিকেটাররা অনুশীলন বয়কট করেছিলেন। এরপরে মিরপুরে খেলা গড়ালে বিদেশি ক্রিকেটাররা মাঠে না আসার মতো ঘটনা ঘটান। এবারও চেক বাউন্স হয়েছে বলে জানা গেছে। বারবার এমন কেন হচ্ছে, তার সমাধানও করতে পারছে না বিসিবি। তাতে বিপিএল নিয়ে সমালোচনার পারদ উঠেছে তুঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, 'এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমার মাথায়ও এটা আগে আসেনি। দুই একটা ফ্রাঞ্চাইজি পেমেন্ট নিয়ে যে কথা দিয়েছিল সেগুলো রাখেনি বা রাখতে পারেনি। তবে তার বাইরে কয়েকটি ফ্রাঞ্চাইজি কিন্তু তাদের দেওয়া সব কথাগুলোই রেখেছে। দুই-একটা ব্যর্থ ফ্রাঞ্চাইজির কারণে ভালো যারা ছিল তাদের কথা কিন্তু উঠে আসেনি।'
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ফাহিম বলেছেন, 'একটা সময় আমরা দেখতাম আলাপ-আলোচনার পরে কাজ হয়েছে। কিন্তু এখন আর আলাপ আলোচনার পরে তাদের ওপর ছেড়ে দিবো না। আমরা নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করব। তারা যে কথাগুলো আমাদের দিয়েছে সেগুলো তারা পালন করছে কি না, সেটি দেখব। আস্থাটা কিছুটা কম বলেই কিন্তু এই কথাটা আসছে যে আমরা এখন প্রতি মুহূর্তেই ওদের নজরদারিতে রাখছি। তারা তাদের দেওয়া কথাগুলো রাখছে কি না। যদি তাদের বিগত সময়ে নিজের কথা মোটামোটিও রাখত তাহলে আমাদের বেশি ভাবতে হতো না। কিন্তু এখন তাদের নিয়মিত নজরে রাখব।'
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন