বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক যৌথ ঘোষণায় জানিয়েছেন যে, সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দুই দিনের বৈঠকে তারা বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ অর্জন করেছে। উভয় পক্ষ এই আলোচনাকে "গঠনমূলক", "উৎপাদনশীল" এবং "খোলামেলা" বলে অভিহিত করেছে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আলোচনার পর এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি একটি গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা ছিল।” চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেং বলেন, “এই আলোচনা উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।”
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ১৪৫% আমদানি শুল্ক আরোপ করেন, যার জবাবে চীনও ১২৫% শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। অবশেষে, জেনেভায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা গোপন আলোচনায় বসেন, যা এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক ছিল।
শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজারে ইতিবাচক প্রভাব
আলোচনার খবরে সোমবার সকালে চীনের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। সাংহাই কম্পোজিট সূচক ০.৪% এবং হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক প্রায় ০.৭% বেড়েছে। মার্কিন ফিউচার মার্কেটেও ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে। ইউয়ান মুদ্রাও ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে।
শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা
বিবিসির এক অনুষ্ঠানে সাবেক মার্কিন বাণিজ্য সচিব ফ্রাঙ্ক ল্যাভিন বলেন, “শুল্ক কিছুটা কমানো হতে পারে, যদিও তা এখনো ঐতিহাসিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে।” তবে হিনরিচ ফাউন্ডেশনের ট্রেড পলিসি প্রধান ডেবোরা এলমস জানান, বড় ধরনের পরিবর্তনের চেয়ে ‘আলোচনা চালিয়ে যাওয়া’র ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
আলোচনার প্রথম দিনের পর ট্রাম্প এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এটিকে “সম্পর্কে সম্পূর্ণ রিসেট” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই চীন আমেরিকান ব্যবসার জন্য আরও উন্মুক্ত হোক। বড় অগ্রগতি হয়েছে!!!”
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিদর্শক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়ালা বলেন, “এই আলোচনাকে আমি একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছি। আশা করি উভয় দেশ উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর সমাধান বের করবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনবে।”
পেছনের প্রেক্ষাপট
ট্রাম্প প্রশাসন 'লিবারেশন ডে' ঘোষণা করে সব আমদানির ওপর একটি ভিত্তিগত শুল্ক আরোপ করে। ৬০টি বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ, যার মধ্যে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রয়েছে, তাদের ওপর বাড়তি হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। এর পাশাপাশি আমদানিকৃত স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ি ও যন্ত্রাংশের উপর আলাদা করে ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়।
তবে যুক্তরাজ্যের সাথে একটি নতুন চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য প্রতি বছর ১ লাখ গাড়ি রপ্তানি করলে সেগুলোর উপর শুল্ক ২৫% থেকে কমিয়ে ১০% করা হবে।
চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানায়, তারা বৈশ্বিক চাহিদা, নিজস্ব স্বার্থ এবং আমেরিকান ব্যবসার আহ্বান বিবেচনায় রেখে আলোচনায় বসেছে। অন্যদিকে, আমেরিকান ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশও শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, শুল্ক কমানো এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই ছিল আলোচনার মূল লক্ষ্য। আলোচনা শেষে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, “আমাদের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।”
সোমবার উভয় দেশ আলোচনার পূর্ণ বিবরণ একসাথে প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন