কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেবে না ভারত, ট্রাম্পকে মোদি জানালেন
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত কখনোই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেবে না। এই বার্তা তিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-কে ফোনালাপে জানিয়েছেন বলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী নিশ্চিত করেছেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব বারবার দিয়ে আসছেন। মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চরমে ওঠার সময় তিনি নিজেকে একটি সমঝোতার মূল কেন্দ্র হিসেবে দাবি করেন। তবে ভারত বলছে, এই শান্তিচুক্তি ছিল সম্পূর্ণ ভারত-পাকিস্তান সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে।
বিক্রম মিশ্রী আরও বলেন, “মোদি ট্রাম্পকে পরিষ্কারভাবে জানান, ওই চার দিনের সংঘাত চলাকালীন কোনও পর্যায়ে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি বা কাশ্মীর ইস্যুতে মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।” তিনি বলেন, “সেনা পর্যায়ে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সংঘাত নিরসনের আলোচনা হয়।”
এদিকে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি দুই পক্ষকে বলেন, “তোমরা যদি এটা থামাও, তাহলে আমরা বড় বাণিজ্য করব। থামাতে না পারলে কিছুই করব না।” এরপর ১০ মে তিনি ঘোষণা দেন যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে ভারত এই দাবিকে একেবারে অস্বীকার করে এসেছে। তাদের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও দেশ এ বিষয়ে কোনও মধ্যস্থতা করেনি। অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমঝোতা স্থাপনে “তিন ডজন দেশ” কূটনৈতিকভাবে জড়িত ছিল।
ট্রাম্প পরে Truth Social-এ লেখেন, "আমি চেষ্টা করব, হাজার বছরের পর একটা সমাধান খুঁজে বের করতে কাশ্মীর ইস্যুতে।” যদিও কাশ্মীর সংকট শুরু হয় ১৯৪৭ সাল থেকে, ট্রাম্পের বক্তব্যে ইতিহাসগত অসঙ্গতিও উঠে এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ভারত মনে করে কাশ্মীর একটি অবিচ্ছেদ্য অভ্যন্তরীণ বিষয়, যেখানে কোনও বিদেশি মধ্যস্থতার জায়গা নেই। বহু দশক ধরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেও সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। ভারত বরাবরই চায় না যে, পশ্চিমা দেশগুলো ভারত ও পাকিস্তানকে সমান স্তরে বিবেচনা করুক। বিশেষ করে, একসাথে দুই দেশ সফর করাও ভারত অপছন্দ করে।
তবে ট্রাম্পের টুইট ও প্রকাশ্য মন্তব্যে দুই দেশকে প্রায়শই সমান গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়, যা ভারতের কূটনৈতিক মহলে অস্বস্তি তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের এমন প্রকাশ্য বক্তব্য দিল্লির “লাল রেখা” (Red Line)-কে চ্যালেঞ্জ করেছে। যদিও এটি ভারত-মার্কিন চলমান বাণিজ্য চুক্তি আলোচনায় বড় প্রভাব ফেলবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমার মধ্যেই একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে চায়, যা ৯ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে। কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যেও এই বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এখন ভারতের অন্যতম কৌশলগত অগ্রাধিকার।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন