আপডেট :

        পাকিস্তানে ইমরান খানকে মুক্তি দিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান

        ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো উচিত

        ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো উচিত

        ডাকাত দেখে অসুস্থ ব্যবসায়ীকে পানি পান করিয়ে সুস্থ করার পর টাকা-স্বর্ণালংকার লুট

        হামলার পর পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

        মেট গালায় ভারতীয় সেলিব্রিটিদের ঝলকানি

        স্পেনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অনিশ্চয়তায় বার্সা-ইন্টার সেমিফাইনাল ম্যাচ

        ফোবানা সম্মেলনে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে

        স্পেনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অনিশ্চয়তায় বার্সা-ইন্টার সেমিফাইনাল ম্যাচ

        কাঁচা না পাকা আম, কোনটি বেশি উপকারী

        এশিয়ার মধ্যে নবম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ

        জলপ্রপাতের ধারে মিললো অভিনেতা রোহিতের মরদেহ

        স্পেনে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যা

        প্রো-ইসরায়েলি জনতার দ্বারা নারী হয়রানির অভিযোগে তদন্তে এনওয়াইপিডি

        লস এঞ্জেলেস কাউন্টির ৫০,০০০-এর বেশি কর্মচারীর দুই দিনের ধর্মঘট শুরু

        ভারতের ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

        নির্বাচনে জয় পেতে যাচ্ছেন মার্ক কার্নি, লিবারেল সদর দপ্তরে উৎসব শুরু

        ইলিনয়ে আফটার-স্কুল ক্যাম্পে গাড়ি দুর্ঘটনায় শিশুসহ চারজন নিহত

        ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে শিথিলতা, স্বস্তি পাচ্ছে মার্কিন গাড়ি শিল্প

        আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি বাবা-মায়ের জন্যঃ বৈভব

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ হতে পারে

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ হতে পারে

ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস

বাংলাদেশ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। বহু বছর ধরে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন না হওয়ায় জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে কমে গেছে। প্রতিবারের মতো এবারও আশঙ্কা রয়েছে যে ভোটারদের ভোটাধিকার কেবল কাগজে-কলমেই থাকবে, বাস্তবে নয়। এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করা। এটি কেবল ভোটের অনুশীলন নয়, বরং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ।

নির্বাচিত স্থানীয় সরকার না থাকায় জনগণ প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। একটি জন্ম নিবন্ধন পেতে কয়েক মাস ঘুরতে হচ্ছে, জমির দলিল ঠিক করতে ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ, ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স পেতে দুর্নীতি আর হয়রানির শিকার হচ্ছে উদ্যোক্তারা। স্কুলে ভর্তি হতে গেলে জন্ম সনদ প্রয়োজন, কিন্তু সেটি সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকেই অসহায় বোধ করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় জনগণ এখন অসহায় আমলাতন্ত্রের দয়ায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নির্বাচিত চেয়ারম্যান, মেয়র বা কাউন্সিলর না থাকায় স্থানীয় প্রশাসন একপ্রকার অভিভাবকহীন হয়ে গেছে, ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে নাগরিক সেবা সবকিছুতেই অকার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের এই দুর্দশা কেবল দুঃখজনকই নয়, এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রমাণ। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করার মানে হচ্ছে, জনগণকে আরও দীর্ঘ সময় ধরে হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হতে বাধ্য করা।

গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পুনরুজ্জীবন

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হওয়ায় ভোটারদের অনাগ্রহ ও হতাশা চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনগুলোর বিতর্কিত ফলাফল মানুষের মধ্যে ভোটের প্রতি অনীহা তৈরি করেছে। স্বচ্ছ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচন এমন এক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে, যা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

স্থানীয় সরকার জনগণের সবচেয়ে কাছের প্রশাসনিক কাঠামো, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের সমস্যাগুলো সমাধান করেন। রাস্তা মেরামত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি নীতি নির্ধারণে স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা জরুরি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন শুধু জনগণের ভোটাধিকারের পুনরুদ্ধারই করবে না, বরং এটি হবে জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি পূর্বপরীক্ষা। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সক্ষমতা যাচাই করতে, ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করতে এবং ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের জন্য বাস্তব পরীক্ষা

নবগঠিত নির্বাচন কমিশন  নিয়ে জনগণের মধ্যে কিছুটা সংশয়  রয়েছে। এটি কি সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে? নাকি এটি ক্ষমতাসীনদের অনুগত একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে? জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা হলে, তা নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করার সেরা সুযোগ হবে।

শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা কেমন হবে সেটিও এই নির্বাচনের মাধ্যমে বোঝা যাবে। গত কয়েকটি নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায়শই পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করে, যা ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে দমননীতিতে রূপ নেয়। তাই, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা যাচাই করারও একটি সুযোগ।

রাজনৈতিক প্রভাব ও অতীত অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের নির্বাচন ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সবসময় বিতর্কিত ও সংঘাতপূর্ণ হয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনে মাত্র ৪১% ভোটার অংশগ্রহণ করেন, যা নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাস্থার সুস্পষ্ট প্রমাণ। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, যদি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না করা হয়, তবে জনগণ ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে এটি  দলগুলোর জন্যও একটি সুযোগ হতে পারে তাদের সমর্থন যাচাই করার।  দলগুলো যদি জনগণের সমর্থন পেতে চায়, তবে তাদের স্থানীয় পর্যায় থেকে সংগঠিত হতে হবে এবং গণসংযোগ বাড়াতে হবে।

স্থানীয় দুর্নীতি কমানো ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশের স্থানীয় প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতিগ্রস্ত। উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নানা অনিয়ম প্রায়শই আলোচনায় আসে। স্থানীয় নির্বাচনের অনুপস্থিতিতে এখন এই দুর্নীতি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্র, প্রভাবশালী মহলের দৌরাত্ম্য এবং অনৈতিক লেনদেন বেড়েছে।

নির্বাচন হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে তারা জনগণের সমস্যার সমাধানে বাধ্য থাকবে এবং জনগণের চাপে দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। এটি গণতন্ত্রের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া, যা বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে।

যথাযথ পরিকল্পনা থাকলে স্থানীয় নির্বাচন অসম্ভব নয়

অনেকে মনে করেন যে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা সম্ভব নয়, কারণ সময় কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, তবে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করা কোনো জটিল কাজ নয়। ধাপে ধাপে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে—প্রথমে সিটি করপোরেশন, এরপর জেলা ও উপজেলা নির্বাচন এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হলে স্বল্প সময়ের মধ্যেও নির্বাচন সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনরুদ্ধার করতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি গভীর সংকটে আছে। জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অবশ্যই আয়োজন করতে হবে। এটি শুধু জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্যই নয়, বরং একটি কার্যকর নির্বাচন ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক মডেল হিসেবেও কাজ করবে।

জাতীয় নির্বাচন যদি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হয়, তবে তার ভিত্তি হতে  পারে  একটি সুষ্ঠু স্থানীয় নির্বাচন। সরকার যদি সত্যিই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চায়, তবে এই নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই। এটি একটি রাজনৈতিক বিকল্প নয়, এটি গণতন্ত্র বাঁচানোর সঠিক  পথ।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত