বাহামাসের একই রিসোর্টে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
সেমি ফাইনালের সেই চার দেশ অন্যদিকে গাপটিল
এই বিশ্বকাপ তা হলে আইসিসি ওয়ানডে
র্যাঙ্কিংয়ের বড় বিজ্ঞাপন হয়ে গেল!র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম এক-দুই-তিন-চারইসেমিফাইনালে! ফাইনালে অবশ্য এক আর দুইয়েরলড়াই দেখার কোনো সুযোগ নেই। সেমিফাইনালযে এক-তিন আর দুই-চার না হয়ে ক্রম অনুসরণকরেছে!আগামী মঙ্গলবার অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণআফ্রিকা। বৃহস্পতিবার সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-ভারত। এমনই হওয়ার কথা ছিল। দিন চল্লিশেকআগে ফিরে যান। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপ শুরুরদিনে সম্ভাব্য চার সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে এইচার দলের নামই ছিল মুখে মুখে। বিশ্বকাপ শুরু হয়েযাওয়ার পরও তা-ই।তা সত্যি হওয়ায় আয়োজকেরা বেশি খুশি।স্বাগতিক দল না থাকলে যেকোনো টুর্নামেন্টইকিছুটা রং হারিয়ে ফেলে। ২৩ বছর আগে দক্ষিণগোলার্ধে আয়োজিত সর্বশেষ বিশ্বকাপেস্বাগতিক দুই দেশের একটি সেমিফাইনালেই উঠতেপারেনি। এবার দুই স্বাগতিকই আছে। সঙ্গেক্রিকেট-বাণিজ্যের লক্ষ্মী ভারতও। আর কী চাই!সেমিফাইনালের চতুর্থ দল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যশেষ চারে স্থান পাওয়াটা উৎসব না হোক, বড়একটা স্বস্তির উপলক্ষ। এই প্রথম তাদের কাছেবিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচ আর পরাজয় সমার্থক নয়।দক্ষিণ আফ্রিকা এমন দল, একদিন না একদিন ‘চোক’করতে ভুলে যাওয়াটা অনিবার্যই ছিল। যা থেকেপ্রেরণা খুঁজতে পারে নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণআফ্রিকার জন্য এত দিন নকআউট ম্যাচ যা ছিল,নিউজিল্যান্ডের জন্য বিশ্বকাপ সেমিফাইনালওতা-ই। এই নিয়ে সপ্তমবারের মতোসেমিফাইনালে। অথচ এখনো বিশ্বকাপ ফাইনালকী বস্তু, সেটি তাদের জানা হয়নি। মাশরাফি বিনমুর্তজা এই বিশ্বকাপেই মজা করে বলছিলেন,‘নিউজিল্যান্ড নিজেরাই ফাইনাল খেলতে চায় না।’সবচেয়ে বেশিবার সেমিফাইনাল খেলাররেকর্ডটিতে নিউজিল্যান্ডের যৌথ অংশীদারঅস্ট্রেলিয়া চারবার বিশ্বকাপ জিতেছে, দুবাররানার্সআপ হয়েছে।একটু খেয়াল করলেই বুঝে ফেলবেন, অস্ট্রেলিয়াকখনো বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হারেনি। এবারওকি তাহলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?সেমিফাইনালেই থেমে যাবে নিউজিল্যান্ড আরআবারও অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালে ওঠা মানেইফাইনাল? তার মানে ২৯ মার্চ এমসিজিতেঅস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা?গত পরশু কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ারকাছে হারার পর পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক অবশ্য সেমিফাইনালে ভারতকে একটু এগিয়েইরাখলেন। কারণ খেলাটা সিডনিতে। এসসিজিরউইকেট বরাবরই স্পিনবান্ধব আর অস্ট্রেলিয়ারভালো কোনো স্পিনার নেই। মিসবাহর পরপরইসংবাদ সম্মেলনে এসে যা শুনে মাইকেল ক্লার্কবললেন, ‘সিডনিতে আমি গতিময় উইকেটও দেখেছি।আর আমাদের স্পিন আক্রমণই বা খারাপ কী?ডোহার্টি আছে, ম্যাক্সওয়েল আছে, প্রয়োজনেআমিও হাত ঘোরাতে পারি।’ক্লার্কের এমনই বলার কথা। কিন্তু ‘বৃহস্পতিবারইআমাদের বিশ্বকাপ ফাইনাল’ কথাটা কেন বললেন,তা ঠিক বোঝা গেল না। সেটি কি প্রতিপক্ষবর্তমান চ্যাম্পিয়ন বলে? গত বিশ্বকাপেচ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিকদের কোয়ার্টারফাইনালেই দেখা হয়ে গিয়েছিল। সেখানেইঅস্ট্রেলিয়ার টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের আশারসমাধি ঘটে। এবারও কি স্বাগতিকদেরই জয় হবে?সেমিফাইনালে যা-ই হোক, তা অঘটন বলেবিবেচিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অস্ট্রেলিয়াহারলে বা নিউজিল্যান্ড জিতলে এত দিনেরইতিহাসটা বদলে যাবে, এই যা! অঘটন বলতেপারেন কাল কোয়ার্টার ফাইনালে মার্টিনগাপটিলের ডাবল সেঞ্চুরিটাকে। দলীয় খেলায়ব্যক্তিগত কীর্তি বা ব্যর্থতার সঙ্গে অবশ্য ‘অঘটন’শব্দটা ঠিক যায় না। তাহলে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলুনবা বিস্ময়! বছর দুয়েক আগে এই গাপটিলইইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে ১৮৯ রানেঅপরাজিত ছিলেন, সেটি মনে রেখেই বলা হচ্ছেকথাটা। অপরাজিত ১৮৯ শুনলে মনে হতে পারে,সেদিনই ডাবল সেঞ্চুরিটা করে ফেলতে পারতেন।আসলে পারতেন না, ইনিংসের ৩ ওভার বাকিথাকতেও গাপটিলের স্কোর ছিল ১৫১, অত দূর যেগেছেন সেটাই বেশি।গাপটিলের ডাবল সেঞ্চুরিকে কেন বিস্ময় বলাহচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর একটু ভাবলে নিজেইপেয়ে যাবেন। ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করতেপারেন, এমন ব্যাটসম্যানদের তালিকা করতে দিলেসম্ভাব্য ১০-১৫ জনের মধ্যেও কি গাপটিলকেরাখতেন আপনি? ওয়ানডের ‘টু হান্ড্রেড ক্লাব’-এএখানেই গাপটিল ব্যতিক্রম। রোহিত শর্মার দু-দুটি ডাবল সেঞ্চুরি অবশ্যই একটু বিস্ময়-জাগানিয়া। তবে বাকি চারজন—টেন্ডুলকার,শেবাগ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গেইলের সঙ্গেকীর্তিটা খুব মানিয়ে যায়।এক বিশ্বকাপেই দুটি ডাবল সেঞ্চুরি বুঝিয়েদিচ্ছে, একবার যখন আগল খুলে গেছে, এখন এটিপ্রায়ই হতে থাকবে। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি দেখতেওয়ানডেকে ৪০ বছর ও ২৯৬২তম ম্যাচ পর্যন্তঅপেক্ষা করতে হয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার একবারতা করে ফেলার পর ১৪ বছরেরও কম সময়ে ৬৮১টিম্যাচেই আরও ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গেল। যামনে করিয়ে দিচ্ছে এক মাইল দৌড় আর রজারব্যানিস্টারের কথা। চার মিনিটের কম সময়ে একমাইল দৌড়ানোটা দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ানডেতেডাবল সেঞ্চুরির মতোই মনুষ্যজাতির পক্ষে অসম্ভববলে বিবেচিত হয়ে আসছিল। ১৯৫৪ সালেব্যানিস্টার তা সম্ভব বলে প্রমাণ করার কয়েকবছরের মধ্যে আরও অনেকেই তা করে ফেলেন। চারমিনিটের মাইলফলকের মতো ওয়ানডেতে ডাবলসেঞ্চুরিও বুঝিয়ে দিচ্ছে, নতুন কোনো কিছু করারক্ষেত্রে মানসিক বাধাটাই আসলে সবচেয়ে বড়।একবার শুধু সম্ভব বলে জানলেই যা উড়ে যায়।ফোনে নিউজিল্যান্ডের সাংবাদিক কাল রসিকতাকরছিলেন, মার্টিন গাপটিলের অবশ্যই মারলনস্যামুয়েলসকে ডিনার করানো উচিত। তৃতীয় বলেইক্যাচ ফেলেছেন বলেই না গাপটিলের রান ৪ নাহয়ে অপরাজিত ২৩৭! ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষেব্রায়ান লারার অপরাজিত ৫০১ রানের ইনিংসেওএমন একটা ঘটনা আছে। ১৮ রানে লারার ক্যাচফেলে দিয়েছিলেন ডারহামের উইকেটকিপার ক্রিসস্কট। যা ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল‘ড্রপ’-এর যোগ্য মর্যাদা পেয়ে আসছে।ওয়ানডে ইতিহাসে এই ‘কীর্তি’টা এখন মারলনস্যামুয়েলসের!
শেয়ার করুন