আপডেট :

        শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ , পত্রিকা অফিসে আগুন

        সেনা-স্থাপনায় হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের

        আওয়ামী লীগের বিষয়ে ফয়সালা

        জম্মু বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ

        জন্ম নিচ্ছে ৬ হাজার শিশু

        ডিমের দাম বাড়ছে, কিন্তু মুরগি পালন কি সত্যিই সাশ্রয়ী? অভিজ্ঞ খামারিদের মতামত

        থ্রি ডোরস ডাউন ব্যান্ডের ব্র্যাড আর্নল্ডের স্টেজ-৪ ক্যানসার, সামার ট্যুর বাতিল

        গ্রিনল্যান্ডে গুপ্তচরবৃত্তি: মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করলো ডেনমার্ক

        লিবিয়ায় অভিবাসীদের বহিষ্কার পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করলেন মার্কিন বিচারক

        কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভে পুলিশের অভিযান, বহু শিক্ষার্থী আটক

        চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে তরুণকে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা

        ট্রাম্পের বিলাসবহুল ডিনারে মাথাপিছু দেড় মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা হয়

        দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে

        ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল

        এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে উল্লখে করেছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির ও মাহিরা খান

        স্কুলে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না বাস্ত্যুচ্যুতরা, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৫

        মার্কিন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে এখন থেকে রিয়েল আইডি বাধ্যতামূলক

        সরকারি চাকরি ফিরে পাচ্ছেন জিয়া পরিবারের সদস্য ডা. জোবাইদা রহমান

        আগুন নিয়ে খেলছে ভারত

        ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উদ্বেগ

আমি একসময় শ্রমিক ছিলাম

আমি একসময় শ্রমিক ছিলাম

আমি একসময় শ্রমিক ছিলাম। সাসেক্স ইউনিভার্সিটিতে এম.এস.সি করার সময় ট্যুইশন ফিসের জন্যে পেট্রোল পাম্পে কাজ করতাম ভোর ৬টা থেকে, পাশাপাশি একটা গুদামে শ্রমিকের কাজ করতাম, আবার উইকএন্ডে রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করতাম। রাতে বাসায় ফিরতে ১ টা বেজে যেতো। শ্রমিক হিসেবে ২০/২৫ কেজি ওজনের চালের বস্তা, পেঁয়াজের বস্তা বইতে হতো, দূরে কোথাও কোনো রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দিতে হতো। আবার রাতে ঐ জায়গাগুলো থেকে পেমেন্টের টাকা আনতে হতো। ভীষণ সাইনোসাইটিসের সমস্যা নিয়েও প্রচন্ড ঠান্ডা ফ্রিজরুমে কাজ করতে হতো। বিলেতে কাউন্টারে যখন সেলসম্যানের কাজ করেছি তখন সেরা সেলসম্যান হতে চেয়েছি। রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজে যে অনেকটা মেধা কাজে লাগাতে হয় তা নিজে ওয়েটার না হলে জানাই হতোনা। মন খারাপের সন্ধ্যা বেলায় হাসিমুখে কাস্টমারের অর্ডার আনা চাট্টিখানি কথা না। পড়ালেখার পাশাপাশি এতো কাজ করেও আমার কখনো নিজেকে ছোটো মনে হতোনা। কাজ যেমনই হোক, আমি করতাম সর্বোচ্চ সততা নিয়ে। ট্যুইশন ফিসের টাকা দেশে চেয়ে মা-বাবাকে বিপদে ফেলবার চাইতে নিজে কাজ করে উপার্জন করাই আমার কাছে ভালো মনে হতো। আমার নানা-নানী, মামা-মামীদের সবাই ওখানে। আমার নানাভাই ছিলেন বটগাছের মতো। আর আমার তিন মামা এবং তিন মামী, তাদের কোনো তুলনাই হয়না। রমজান মাসে ইফতারের সময় পেট্রোল পাম্পে ছুটি ছিলোনা। আমার ছোটমামী বাইরে থেকে শক্ত আর মনটা একদম নরম। ছোটমামী নিজে ইফতার না করে অনেকটা পথ হেঁটে এসে আমায় ইফতার পৌঁছে দিতেন- এই ঋণ কেমন করে শোধ করি? এক কাজ থেকে অন্য কাজে যাওয়ার ফাঁকে সময় থাকতো কম। বড়মামী আমার সময় বাঁচানোর জন্যে গোসলের পানি গরম করে দরোজায় দাঁড়িয়ে রইতেন। গোসল করে বের হলে প্রায়ই নতুন জামা টেবিলে গুছিয়ে রাখতেন। আর আমার নানু, পৃথিবীর সেরা নানু। আমি তাকে দিদি বলে ডাকি। দিদি প্রতিদিন একলা ঘরে শুধু আমার জন্যে মজার মজার রান্না করে পথের দিকে চেয়ে রইতেন। আমার সব রাগ-অভিমান চলতো এই দিদির উপর তবু দিদি কখনো বিরক্ত হতেননা। দিদি বিলেতে না থাকলে আমার কখনো মাস্টার্স করা সম্ভবই হতোনা। তাদের সাথেই থেকেছি, অনেক অনেক আদর-যতন আর সাহায্য পেয়েছি। তবে যখনই তারা আমার ট্যুইশন ফিস দিতে চেয়েছেন, আমি বিনয়ের সাথে না করেছি। এই টাকাটা আমি নিজের শ্রম দিয়ে কাজ করেই আয় করেছি।

২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ছিলাম। তখন মানুষ লন্ডন থাকতে চাইতো যেকোনো মূল্যে, কিন্তু সেই সময় আমি দেশে চলে এসেছিলাম, স্বেচ্ছায়। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী ছিলো, ভালো চাকুরি ছিলো, অনেক টাকার হাতছানি ছিলো, বৃটিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিলো কিন্তু এসব কিছুই আমায় টানেনি, যতোটা টেনেছিলো আমায় আমার দেশ। সীমিত সামর্থ্যের মাঝেই দেশের কাজ করতে চেয়েছি। আমার ছাত্র-ছাত্রীকে কম্পিউটার সায়েন্স কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কঠিন বিষয়গুলো সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। ক্লাসে হাসিখুশি থেকে পরীক্ষার হলে কড়া হয়েছি। পড়ার ফাঁকে সময় যখনই পেয়েছি- সহজ ভাষায় দেশকে ভালোবাসা শিখিয়েছি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শিখিয়েছি, মা-বাবাকে সম্মান করতে বলেছি আর সকল রকম শ্রম এবং শ্রমজীবী মানুষকে মর্যাদা করা শিখিয়েছি। বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে কর্মহীন মানুষকে পরিশ্রম করে কর্মসংস্থানের পথ দেখানোর চেষ্টা করেছি। নিজের শ্রম দিয়ে কি করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়- সেই পথ বাতলে দেওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছি।

আজ ১লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে ওই শহরের হে’ মার্কেটের শ্রমিকরা। মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১১ শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন আরও বহু শ্রমিক। পরে প্রহসনমূলক বিচারে ৬ জন শ্রমিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। পরবর্তীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে দিনটি ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সবাইকে অনুরোধ, প্রতিটা শ্রমিকের প্রতি ফোঁটা ঘামের মর্যাদা দিতে শিখুন। রিকশাচালক, দিনমজুর, চা-য়ের দোকানের পিচ্চি ছেলেটা, বাসার কাজের মেয়েটা, ড্রাইভার, দোকানের সেলসম্যান, অফিসের পিয়ন, রেস্টুরেন্টের ওয়েটার কিংবা এমন পেশার মানুষদেরকে ছোটো করে না দেখে তাদের দীর্ঘশ্বাস শুনুন। তাদের সাথে জবরদস্তুি না করে আবেগ নিয়ে কাজ করুন। কঠিন করে শক্ত কথা না বলে ভালোবেসে হাসিমুখে কথা বলুন। ভদ্র পোশাকের আমাদের চাইতে ময়লা কাপড়ের ওরাই হয়তো বেশি সৎ। হয়তো আমাদের আয়ের চাইতে তাদের আয়টুকু সৃষ্টিকর্তার কাছে বেশি পছন্দের। হয়তো তাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের কারণে হাশরের মাঠে শেষ বিচারের দিন আপনি-আমি হবো সৌভাগ্যবান। সকল শ্রমজীবী ভাই-বোনদের জন্যে অনেক শ্রদ্ধা...


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট, বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত