করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কেন?
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর আরো বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও তা মোটেও চিন্তার বিষয় নয়। কয়েক দিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেটে যাবে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন এক্সেসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. উইলিয়ামস মস জানান, 'দ্বিতীয় টিকা নেয়ার পর মৃদু প্রতিক্রিয়ার মানে হচ্ছে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করছে'।
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন জানায়, মডার্না এবং ফাইজার-দুইটি টিকা নেওয়ার পরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
সেগুলো হলো- জ্বর, মাথাব্যথা, ঠান্ডা, পেশী ব্যথা কিংবা দূর্বলতা। এছাড়া টিকা নেয়ার স্থানে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। তবে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অল্প দিনের মধ্যেই সেরে যাবে।
ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর অনেক টিকাগ্রহীতাই তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার অনেক বেশি।
তবে এর কারণ জানতে হলে আমাদের বুঝতে হবে টিকা কিভাবে কাজ করে এবং কেনো এর কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
করোনার টিকা কীভাবে কাজ করে?
ফাইজার ও মডার্নার টিকা দুইটিই এমআরএনএ টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, মূলত রোগ প্রতিষেধক টিকা বা ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগের দুর্বল কিংবা মৃত ব্যাকটেরিয়া রোগীর দেহে ঢোকানো হয়।
পরবর্তীতে এসব ব্যাকটেরিয়া নিজেরাই স্পাইক তৈরি করে এবং সেগুলো শরীরে বিদ্যমান করোনার বিরুদ্ধে কাজ করে ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে।
তবে এই ইমিউন রেসপন্স এর কারণে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ ফলে মাথাব্যথা, জ্বর এবং পেশীতে ব্যথা দেখা দিতে পারে। তবে এটির মানেই হচ্ছে শরীরে প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে এবং ইমিউন সিস্টেম তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর কেনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?
দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর অনেকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় বলে জানা গেছে। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের শরীরে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সেল রয়েছে, যার নাম টি-সেল আর বি-সেল। আমাদের শরীরে যখন নতুন কোনো সাবস্ট্যানস প্রবেশ করানো হয়, তবে আমাদের শরীর নতুন এই সাবস্ট্যানস এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া শুরু করে।
প্রথম ডোজ নেওয়ার পর মূলত আমাদের দেহে একটি আর্মি সেলের সৃষ্টি হয়। পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর আরো বড় ধরণের ইমিউন সিস্টেম এর কার্যকারিতা শুরু হয়। যার কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এতে আমাদের ইনফ্লামেটোরি সিস্টেমে আরো তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর থেকেও দ্বিতীয় ডোজ টিকায় ইনফ্ল্যামেশন প্রক্রিয়া আরো তীব্র হয়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দিলে কী টিকা কাজ করবে না?
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া মানে শরীরে ইমিউন সিস্টেম তৈরি হচ্ছে। তাহলে প্রতিক্রিয়া না হলে কী টিকা কাজ করবে না?
এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, যাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়, তাদের ক্ষেত্রেও টিকা সমান ভাবে কার্যকরী হবে। বিভিন্ন কারণে তাদের দেহের ইনফ্ল্যামেটরি সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া কিছুটা কম হয়। ফলে অনেকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া কেন জরুরি? অন্যথায় কী হবে?
দ্বিতীয় ধাপের টিকা নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে জানান শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এন্থনী ফাউসি।
এর কারণ, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, দুইটি টিকার দুই ডোজের কার্যকারিতা দেখা গেছে ৯৪ কিংবা ৯৫ শতাংশ। এটি দুই ডোজ টিকার সম্মিলিত কার্যকারিতা। তবে একটি ডোজের কার্যকারিতা এর থেকে অনেক কম হবে। ফলে সুরক্ষার সম্ভাবনা বেশ খানিকটা কম হবে।
মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ২৮ দিন পর নিতে হবে এবং ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রথম ডোজ নেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ ২১ দিন পর নিতে হবে।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ লাখ বাসিন্দা টিকার দুইটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। যা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ড ইমিউনিটি পেতে হলে অন্তত ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বাসিন্দাকে টিকা দিতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন