আপডেট :

        মাদারীপুরে গাড়ির ধাক্কায় অজ্ঞাতনামা এক পথচারীর মৃত্যু

        রাজধানীতে শুরু হয়েছে বজ্রসহ বৃষ্টি

        টাইটানিক সিনেমার অভিনেতা মারা গেছেন

        আবারো গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

        দুটি এম্বুলেন্সের একটি নষ্ট গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

        নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটে মোট শয্যা হবে এক হাজার

        উপজেলা নির্বাচন: ৩ দিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ

        ব্যাটে জয় পেলো বাংলাদেশ

        ব্যাটে জয় পেলো বাংলাদেশ

        সম্পূর্ণ বাংলা সাপোর্টের স্মার্টওয়াচ নিয়ে এলো দেশীয় প্রযুক্তি

        ছায়ানটের অন্যতম সদস্য শ্রী অশোক রায় নন্দীর মৃত্যু

        ইসরায়েলে আল জাজিরার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশর পর অফিসে পুলিশের অভিযান

        ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৫৭, ঘরছাড়া ৭০ হাজার মানুষ

        ইসরায়েলে আল-জাজিরা টিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত

        মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ

        ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর ইসরাইলি সমর্থকদের হামলা

        যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষিকা গ্রেপ্তার

        যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ’ বলে উল্লেখ উত্তর কোরিয়ার

        যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন কর্মকর্তার মৃত্যু

        বান্ধবী খুঁজে পেতে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন, ব্যাপক সাড়া

নিউইয়র্কে সংগ্রামী কবি আলেয়া চৌধুরীর ইন্তেকাল

নিউইয়র্কে সংগ্রামী কবি আলেয়া চৌধুরীর ইন্তেকাল

নিউইয়র্কসহ দেশে-বিদেশে বাংলাদেশীর পরিচিত মুখ সংগ্রামী নারী, ‘আমি হার্লেমের নিগ্রো’ কাব্যগ্রন্থের কবি আলেয়া চৌধুরী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। নিউয়র্কের রকল্যান্ডে তার বাসার বাথরুম থেকে স্থানীয় পুলিশ গত ৩ আগষ্ট সোমবার তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। তার বয়স হয়েছিলো ৫৯ বছর। তিনি একাই ঐ বাসায় বসবাস করতেন। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে প্রিসেন্ট। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিক সহ নানা রোগে ভুগছিলেন। পুলিশের ধারণা দু/তিন আগে তাঁর মৃতু্যু হয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

মুক্তধারা নিউইয়র্ক-এর বিশ্বজিৎ সাহা মরহুমা আলেয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুশ্রী ব্যানার্জীর বরাত দিয়ে জানান, মঞ্জুশ্রী সারাদিন ফোন করেছিলেন, তিনি ফোন ধরছেন না। খবর জানতে চান আলেয়া চৌধুরীর। কিন্তু কোন খবর নেই। মঞ্জশ্রী ব্যানার্জী তার ছেলেকে দেখতে পাঠান আলেয়া চৌধুরীর বাসায়। দরজা বন্ধ। ছেলে বেল বাজাতে থাকে অনেকক্ষণ। এরপর গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্জুশ্রী দি পুলিশ কল করেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় আলেয়া চৌধুরীর নিথর দেহ বাথটবের মধ্যে পড়ে রয়েছে।

আলেয়া চৌধুরী নিউইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টির স্প্রিংভ্যালীতে বসবাস করতেন। রকল্যান্ড কাউন্টিতে জর্জ ওয়াশিংটন ব্রীজ থেকে ২০ মাইল উত্তরে আলেয়া চৌধুরীর ২টি বাড়ী রয়েছে। আলেয়া চৌধুরীর আপন কোন আত্মীয়-স্বজন নেই নিউইয়র্কে। এক সময় মঞ্জুশ্রী ব্যানার্জীর বাসায় থাকতেন আলেয়া চৌধুরী। তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দেয়ার পর পৃথকভাবে থাকা শুরু করেন আলেয়া চৌধুরী।
সর্বশেষ গত ১ আগষ্ট রাত ৯.৪৫ মিনিটে তিনি শেষবারের মত তাঁর প্রিয় ফেসবুকে (অনেক সময় কাটাতেন ফেসবুকে) ছিলেন বলে নিউইয়র্কের সঙ্গীত শিল্পী তাহমিনা শহীদ তার পোস্টটি শেয়ার করেন।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে আলেয়া চৌধুরীর ছোট ভাই ফোন করে কবির মরদেহ বাংলাদেশ নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তার মরদেহ নিউইয়কেই দাফন করা হয়েছে। জানাজা ও দাফনের আগে তার মরদেহ স্থানীয় একটি ফিউনারেল হোমে রাখা হয়। ইসলামিক সেন্টার রকল্যান্ড (আইসিআর)-এ বুধবার জানাজা শেষে স্থানীয় কররস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। 

জানা গেছে, কবি আলেয়া চৌধুরীর জন্ম ১৯৬১ সালে। তার মাতার নাম আম্বিয়া খাতুন আর বাবার নাম সুলতান আলম চৌধুরী। অভাবের কারণে তিনি বেশীদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। ছিলেন স্বশিক্ষিত নারী। ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত অধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদ পত্রিকা অফিসের খেলাঘরে তিনি প্রথম স্বরচিত কবিতা পড়েন। এরপর ১৯৭০ সালে বেগম পত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৭৩ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘জীবনের স্টেশনে’ পদ্মা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ইরান ও জার্মানী ভ্রমণ করেন। অবশেষে ২০ বছর বয়সে মাছ ধরার নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হন। সাম্রাজ্যবাদ, জঙ্গিবাদ এবং শান্তির সপক্ষে ঘৃণা প্রকাশ করে তাঁর কবিতাকে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরেন।

চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন একটি লেখা লিখে আলেয়া চৌধুরী আলোড়ন তুলেছিলেন। সেই আলেয়া চৌধুরী, যিনি জীবনসংগ্রামে কখনো হার মানেননি। ১৯৬৯-এ গ্রাম্য পঞ্চায়েতের অমানবিক বিচারে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসেন। তাঁর মা তাঁকে স্বাধীনতার পথ দেখিয়ে গ্রাম ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ঢাকায় এসে আলেয়া চৌধুরী হকারের কাজ নেন। খবরের কাগজ বিলি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে চাঞ্চল্যকর খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার পেশাগত গাড়িচালক হওয়ার প্রচেষ্টা আবারও দৈনিক বাংলা’র লোক-লোকালয় পাতায় সাংবাদিক হেদায়েত হোসাইনের কলামে তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন তাঁকে সেলাই মেশিন দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আত্মমর্যাদায় দীপ্ত আলেয়া চৌধুরী তা গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নারীদের গাড়িচালক পেশায় স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস করার প্রস্তাব রেখেছিলেন।

বাংলাদেশের সাহিত্য, স্বাধীনতার ইতিহাসকে কবি আলেয়া চৌধুরী সগর্বে ধারণ করেছেন। প্রখ্যাত লেখকদের সাহচর্যে বেড়ে উঠেছিলেন কবি আলেয়া চৌধুরী। তিনি বাংঙালী/বাংলাদেশীদের গৌরব ও আইকন হতে পারতেন।


এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/এন

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত