আপডেট :

        ঢাকার ভেতরে যারা আছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে ডিএমপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

        ধ্বংসযজ্ঞকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে হবে: শেখ হাসিনা

        সীমিত পরিসরে হলেও চালু থাকুক ইন্টারনেট সেবা

        চার স্টেশন বন্ধ, দুই ভাগে চলছে ট্রেন

        বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) গেটে আগুন

        বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) গেটে আগুন

        ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে থেকে পুলিশদের উদ্ধার করতে হেলিকপ্টার

        একটি মাত্র ভিসায় ৬টি দেশ ভ্রমণ করা যায়

        প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা করবেন আইনমন্ত্রী

        ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ

        হামলার ঘটনাকে ‘নৃশংস’ উল্লেখ করে একের পর এক পদত্যাগ

        শুধু কোটা নয়, গোটা দেশ সংস্কার প্রয়োজন

        মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বিঘ্ন হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা

        ইউরো শেষে পদত্যাগ করলেন সাউথগেট

        ফ্লাইওভারে সং ঘ র্ষের ঘটনায় এক তরুণ নি হ ত

        রাহুল গান্ধী পরিপক্ব রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন মন্তব্য করলেন অমর্ত্য সেন

        ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবী

        ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবী

        সিদ্ধান্ত মোতাবেক হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানালো ঢাবি কর্তৃপক্ষ

        ট্রাম্পকে জয়ী করতে মাসে ৪৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইলন মাস্কের

সিলেটের নদ-নদীগুলোতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা

সিলেটের নদ-নদীগুলোতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবলবর্ষণে সিলেটের নদ-নদীগুলোতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জে ৫০ গ্রামসহ শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 


বৃহস্পতিবার (৩০ মে) গভীর রাতে বারোহাল উপজেলার বারোহালগ্রাম, কাজলশাহ ইউপির আটগ্রামের নলুহাটি গ্রামের সুরমা নদীর বাঁধ, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবরিয়া, বারোখাল, রারই, খলাছড়া, মাঝর গ্রামসহ কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকে। বিকালেও হু-হু করে পানি ঢুকছিল বিভিন্ন পয়েন্টে। 

ভারতের বরাক নদী দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসা পানি সুরাম-কুশিয়ারার মোহনায় জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌছালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে দিনভর প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি বালি-মাটি দিয়ে পানি আটকানো হয়। এ ছাড়া একই পদ্ধতিতে জকিগঞ্জ শহরকে বন্যা মুক্ত রাখার কাজ চলছে। ঢলের তীব্র চাপে কুশিয়রা তীরবর্তী জকিগঞ্জের অধিবাসীরা আতঙ্কে রয়েছেন। 


উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসনিম জানান, উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

  
এদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জৈন্তা-গোয়াইনঘাট এলাকা পরিদর্শন করে সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে বলেন, ঐ এলাকায় ১০০ দুর্গতকে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা নগদ, ১৫ টন জিআর চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে ও নিরাপদে সরিয়ে আনা হচ্ছে। পাঁচটি উপজেলায় জরুরিভিত্তিতে প্রায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খেলা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। 

তিনি জানান, জৈন্তা, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাটে পানির তোড় বেশি। তবে বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 
সিলেটের বন্যা কবলিত ৫টি উপজেলা হচ্ছে: জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলার পাঁচটি উপজেলার শতাধিক গ্রাম, বাড়ি-ঘর প্লাবিত। জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবেছে। লোকজন গরুবাছুর, ধান-চাল সহায় সম্পদ নিয়ে বিপাকে। অনেক স্থানে লোকজনের খাদ্য, ঘরের আসবাবপত্র ডুবে গেছে। জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িঘর, জনপদ, সড়ক ও স্কুলগুলোতে পানি উঠেছে। অনেক স্থানে সড়ক ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অনেকেই বাড়িঘর ফেলে উচুস্থান বা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। জৈন্তাপুরের বিরাইমরা গ্রামের কাছে সড়কে দাঁড়ানো ট্রাকের উপর আশ্রয় নেয় ৫টি পরিবার। অনেক পরিবার পানিবন্দী। জৈন্তুাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, পরিবহন শ্রমিক অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। জৈন্তাপুরের অন্তত ৯০ ভাগ লোকের বাড়িঘরে পানি। বুধবার রাতে হঠাৎ করে ঘরের মধ্যে বুক সমান পানি বেড়ে গেলে কেউ ফেসবুকে লাইভ দিয়ে উদ্ধারের আকুতি জানালে পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে উদ্ধার করলে অনেকেই প্রাণে বেঁচে যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, জৈন্তাপুরের রাংপানি এলাকায় প্রবল বেগে ঢলের পানি নামছে।

সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সন্ধ্যায় জানান, অমলসিদে কুশিয়ারায় পানির তীব্র চাপ। সেখানে নদী বিপদ সীমার ২ মিটার উপরে। এ ছাড়া জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে।


জৈন্তাপুর সংবাদদাতা জানান, এদিকে জৈন্তাপুরে বহু মাছের ঘের থেকে মাছ বের হয়ে গেছে। পাখিটিকি এলাকায় মাছের ঘেরগুলো তীর সমান পানি। সেখানে জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার দৃশ্য চোখে পড়ে। সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক নিমজ্জিত। বহুস্থানে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে অথবা পানি ছুঁই-ছুঁই করছে। এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। গোয়াইনঘাট, নয়াখেল, সারিঘাট, জাফলং এলাকার বহু স্থান ডুবে গেছে। এলাকাবাসী জানান, বৃষ্টি হলেই ঢলের প্রকোপ বাড়ে। 

জৈন্তাপুরের চাংগিল বাজারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বিরাইমরা গ্রামের রানু বেগম (৫০) বলেন, দুই ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতনি মিলে তারা সাতজন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। 
বাড়ি প্লাবিত হওয়ায় নৌকায় করে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন। ঘরের ভেতর যা ছিল, প্রায় সবই পানিতে ভেসে গেছে।


গোয়াইঘাট সংবাদদাতা জানান, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। জেলা সদরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের তিনটি রাস্তাই তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে অনেক পরিবারই পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নৌকার অভাবে অনেকে নিরাপদে সরতেও পারছেন না। 

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৪২ হাজার ৯০০টি পরিবারের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন মানুষ দুর্যোগকবলিত। এখানে চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৬৪৫। উপজেলায় ১০টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ৩৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর কৃষিজমি তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাটে ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮টি, কানাইঘাটে ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি, জকিগঞ্জে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বাকি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অন্য উপজেলায় রয়েছে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে মোট ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর আউশ ধান, আউশ বীজতলা ও সবজিখেত কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধানের জমি রয়েছে ১ হাজার ৬৮২ হেক্টর। এ ছাড়া ৯২৭ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ২ হাজার ৯৯২ হেক্টর সবজিখেত রয়েছে। জৈন্তাপুরে ক্ষেতের মাচাং-এর উপর পানিতে কচুরীপানা খেলছে। 

সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, এই দুর্যোগে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে পানি নেমে গেলে। 

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকায় পানি ক্রমেই বাড়ছে।

 

 

 

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত