হাকালুকির মৎস্য অভয়াশ্রম শুকিয়ে মাছ লুটপাট
দেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমি হাকালুকি হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৩শ’ বিলের ৮টি মৎস্য বিলকে সরকার স্থায়ী অভয়াশ্রম ঘোষণা করে এগুলোর ইজারা প্রদান ও মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। মাছের অবাধ বিচরণ ও সংরক্ষণের জন্য ২০২৩ সালে মৎস্য অধিদপ্তর অভয়াশ্রম বিলগুলোতে ১২ লক্ষাধিক টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে।
অভিযোগে উঠেছে, এই ৮ অভয়াশ্রম বিলের মধ্যে ৮০ একর আয়তনের ‘তেকুনি বিল কৈরের মুড়া ও কেসবডহর গুপ (বদ্ধ)’ অভয়াশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবি কমিটির সদস্যরা বর্ষায় বিভিন্ন জেলে গ্রুপের কাছে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছে। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ কেটে পানি শুকিয়ে অবৈধভাবে মাছ লুট করেছে।এ ব্যাপারে অভয়াশ্রম তীরবর্তী বড়লেখা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান, নিমার উদ্দিন, আরফাত মিয়া, ছায়েদ আহমদ, আলাল উদ্দিন প্রমুখ বৃহস্পতিবার তেকুনি অভয়াশ্রম বিলের মাছ লুটকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউএন’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৮০ একরের তেকুনী অভয়াশ্রম বিলের ১ একরেও নেই পানি। বিলের মাঝখানে এখন গরুর বাথান, হাঁসের খামার। অথচ বিল ভর্তি পানি থাকার কথা। এলাকাবাসি জানান, ফেঞ্চুগঞ্জের যুদিষ্ঠপুরের লোকজন বাঁধ কেটে জুড়ী নদীতে পানি ছেড়ে বিল শুকিয়ে মাছ বিক্রি আহরণ করেছে। মাছ লুটের পর পার্শ্ববর্তী দেড় হাজার একরের হাওরখাল বিলের বাঁধ কেটে পানি ঢুকিয়ে রেখেছে।
জানতে চাইলে তারা জানান, স্বেচ্ছাসেবি কমিটি বিলটি তাদের কাছে বিক্রি করেছে। গোলাপগঞ্জের কালি কৃষ্ণপুর গ্রামের মাহমদ আলী, সাইদ আলম, ইসলামপুরের মামুন মিয়া, আকির হোসেন প্রমুখ জানান, তারা জানতেন তেকুনি বিলটি সরকারের স্থায়ী অভয়াশ্রম। বিল থেকে মাছ ধরা দেখে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সদস্যদের বাঁধা দিতে গেলে তারা বলেছে, অভয়াশ্রমের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের সমিতি বিলটি ইজারা নিয়েছে। অভয়াশ্রম বিলটি ইজারা নেওয়ার কথা জোরালোভাবে তারা এলাকায় প্রচার করে। এতে কেউ আর মাছ ধরায় বাঁধা দিতে যাননি।
৮০ একরের এই স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রমের উন্নয়নে দুই বছর আগে মৎস্য অধিদপ্তর বাঁধ নির্মাণ ও বাঁশের কাটা ফেলেছে। এতে সরকারের ৩ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে উপজেলা মৎস্য অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি বিল পাহারায় ৩০ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবি সমিতিকে দায়িত্ব দেয়। এই সমিতির সদস্যরাই পরবর্তীতে ভক্ষকে রূপ নেয়। বর্ষায় বিভিন্ন জেলে গ্রুপের কাছে খেউ প্রতি ১ লাখ/দেড় লাখ টাকায় মাছ ধরতে দিয়েছে। এভাবে গত ২/৩ মাস রাতের অন্ধকারে নৌকা বোঝাই করে লাখ লাখ টাকার মাছ ধরেছে। তেকুনি বিলের মাছ বিক্রি হয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেটের কাজির বাজারে। সম্প্রতি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব পাওয়া অসাধুরা মৎস্য বিভাগের নির্মিত বাঁধ কেটে জুড়ী নদীতে পানি ছেড়ে বিল শুকিয়ে মাছ লুট করেছে। জানুয়ারির শুরুতেই মাছ আহরণ শুরু করে। তেকুনি বিলের মাছ লুট করে সাধু সাজতে এখন লুটেরা বাহিনী হাওর খাল বিলের পানি ঢুকিয়ে ভরে দিচ্ছে।
বড়লেখা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন আফজল জানান, স্থায়ী অভয়াশ্রম তেকুনি বিল দেখাশুনা, রক্ষনাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ছয় শর্তে দুই বছরের জন্য উপজেলার মুর্শিবাদকুরা ও ইসলামপুর গ্রামের ৩০ সদস্যের একটি সেচ্ছাসেবি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই স্বেচ্ছাসেবি কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ পাচ্ছেন।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসলাম সারোয়ার অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সরেজমিনে তদন্ত করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন