আপডেট :

        প্রাইজবন্ডে প্রথম পুরস্কার

        পাউবোর ৩৭০ বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন

        সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুৎহীন

        সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা সন্ধ্যায়

        সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা সন্ধ্যায়

        ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ

        সুন্দরবনে সন্ধ্যায়ও বিক্ষিপ্তভাবে অর্ধশতাধিক স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়

        সুন্দরবনে সন্ধ্যায়ও বিক্ষিপ্তভাবে অর্ধশতাধিক স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়

        উচ্চশিক্ষাকে ডিজিটালাইজেশনে আওতায় আনার সিদ্ধান্ত

        কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওপরে ড্রোন, পাহারায় পুলিশ’

        বাংলাদেশের গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয় বরং উন্মুক্ত

        বাংলাদেশের গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয় বরং উন্মুক্ত

        দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছয় দিন ধরে হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি

        দীর্ঘ সময় পর ঢাকা-জয়দেবপুরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

        জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পারফর্ম বিবেচনা করে বিশ্বকাপ ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে

        জবিতে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাড মেকিং প্রতিযোগিতা

        মিয়ানমারের আরও ৪০ সীমান্তরক্ষী টেকনাফে

        রাজউকের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ এলো নতুন বিধিমালা

        সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

        চুক্তিতে যেতে আগ্রহ নন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন

যত্রতত্র মূত্রত্যাগ ঠেকাতে মসজিদ ও আরবি ভাষার অবমাননাকর ব্যবহার

যত্রতত্র মূত্রত্যাগ ঠেকাতে মসজিদ ও আরবি ভাষার অবমাননাকর ব্যবহার

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এখন আরবি ভাষায় লিখে দেয়া হয়েছে ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ।’ ধর্ম মন্ত্রণালয় যে এ উদ্যোগটি নিয়েছে এ কথাটি বাংলায় লিখে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এও বলে দেয়া হয়েছে যে, সামান্য দূরে বা বিপরীতে রয়েছে মসজিদ। বিষয়টি পথচারীদের কতটুকু দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা বোঝা না গেলেও মিডিয়ার যে বেশ নজর কেড়েছে সেটি স্পষ্ট। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার আরবি লেখার দেয়ালচিত্র ছেপে দিয়ে বলেছে, ভাষা যখন গুরুত্বপূর্ণ, পথচারীদের যততত্র মূত্রত্যাগ রোধ করতে বাংলায় লেখা নোটিশ যখন সম্পূর্ণ অকার্যকর তখন সরকার আরবি ভাষায় এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনামা তৈরি করেছে। ধারণা এই যে, মুসলমানদের ধর্মীয় পবিত্র ভাষা আরবিতে লেখা এ নির্দেশনা কাজ করবে। এ বিষয়ে মতিঝিল বায়তুল আতিক জামে মসজিদের ইমাম মুফতি ফজলুল্লাহ রাহমানী ইনকিলাবকে বলেন, বাংলা মটরের পাশে এমন একটি লেখা আমারও নজরে পড়েছে। লেখাটিতে বানান ভুল রয়েছে। ব্যাকরণগতভাবেও লেখাটি শুদ্ধ হয়নি। তা ছাড়া এ আরবি লেখাটির অর্থ কি তা শতকরা একভাগ লোকও জানে কি না সন্দেহ। যারা রাস্তায় প্রস্রাব করে তারা তো অবশ্যই এর অর্থ জানে না, এমনকি পড়তেও পারে না। যখন কোন নগরীতে পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন গণশৌচাগার না থাকে তখন পথচারীরা খুব অসুবিধায় পড়লেই রাস্তার পাশে বা খালি জায়গায় প্রস্রাব করে। নোটিশ দিয়ে বা জরিমানা করে এসব পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। সরকারের উচিত এ ধরনের অদ্ভুত উদ্যোগ না নিয়ে পথচারীদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা। অসচেতন বা অপারগ মানুষের প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা না করে তাদের মূত্রত্যাগের মুখে আরবি ভাষাকে স্থাপন করার চিন্তাকে কিছুতেই সুস্থ চিন্তা বলা যায় না। এতে পবিত্র কোরআনের ভাষাকে একটি নিকৃষ্ট জায়গায় ব্যবহার এবং এর ধর্মীয় পবিত্র আবেদনকে ধ্বংস করার দায় সরকারকেই নিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এর নিন্দা জানাই। বিষয়টি বিবিসি’র পরিবেশনায় এসেছে এভাবে, বাংলাদেশে প্রকাশ্য স্থানে মূত্রত্যাগ ঠেকাতে রাজধানী ঢাকার দেয়ালে আরবি ভাষা ব্যবহারের এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন। এ লক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে আজকাল আরবি ভাষায় ‘যেখানে সেখানে প্রস্রাব না করার’ বার্তা লিখে দেয়া হচ্ছে। ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের এক বার্তা সংবলিত একটি ভিডিও আজকাল ইউটিউব এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটে ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে। এতে মন্ত্রী বলছেন, ঢাকা শহরের মসজিদগুলোতে প্রস্রাবের জায়গা থাকলেও অনেকে বাইরে প্রস্রাব করছে। ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ লেখা দেয়ালেও লোকে প্রস্রাব করছে। ভিডিওটিতে বলা হচ্ছে, ৯০ শতাংশ মুসলিম-অধ্যুষিত বাংলাদেশে আরবি একটি পবিত্র ভাষা হিসেবে বিবেচিত, যদিও খুব কম লোকই এ ভাষা জানেন বা বোঝেন। তাই প্রকাশ্যে প্রস্রাব না করার বার্তাটি তারা রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোতে আরবি ভাষাতে লিখে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও আবার দিকনির্দেশক চিহ্নকে আরবির পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা হচ্ছে : ‘১০০ হাত দূরে মসজিদ।’ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান বিবিসিকে বলেছেন, আরবি ভাষা পবিত্র কোরআনের ভাষা, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে আরবি ভাষার ব্যাপারে একটা সম্মান ও ভীতির অনুভূতি কাজ করে, তাই দেয়ালে আরবি লেখা দেখলে সেখানে লোকেরা প্রস্রাব করবে না এই ভাবনা থেকেই এ উদ্যোগ। কিছুদিন আগে ধর্মমন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনকে একটি চিঠি দিয়ে তার এই ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। সিটি কর্পোরেশনই এ দেয়াল লিখনের কাজটা করছে বলে সচিব জানান। ঢাকার মতো জনবহুল শহরে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা না করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে এ উদ্যোগ কতটা যথাযথÑ এমন প্রশ্ন করা হলে সচিব তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কোনো মুসলমানই এমনটা মনে করবে না, বরং একটা ভালো কাজ হিসেবে একে সমর্থন করবে। একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত স্থপতি ইশফাক আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগটি দেখে আমার ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার কথা মনে পড়ছে। রাজার পায়ে ধূলি না লাগার উপায় হিসেবে যখন গোটা দেশকে চামড়া দিয়ে মুড়ে ফেলা অথবা পানি ছিটিয়ে কাদায় ডুবিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, তখন এসব বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে কেউ একজন বলেছিলেন যে, মহারাজার পা দুটোকে চামড়ার পাদুকা দিয়ে ঢেকে দিলেই তো সমস্যা মিটে যায়। একবিংশ শতাব্দীতেও যে এমন গাধামি রয়ে গেছে তা ভাবতেও অবাক লাগে। মানুষ প্রস্রাব করে বলে ওই জায়গায় কোরআনের অক্ষর টানিয়ে দিতে হবে? যারা এমন উর্বর মস্তিষ্ক নিয়ে চলেন তারা এসব জায়গায় শ্রদ্ধাভাজন জাতীয় নেতাদের ছবি লাগিয়ে দিলেও তো পারেন। এতেও তো মানুষ প্রস্রাব করা থেকে বিরত থাকবে। তা ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় কি মসজিদকে গণ-শৌচাগার বলে পরিচিত করাতে চাইছে? তা না হলে যথেষ্ট পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা না করে সব পথচারীকে তারা মূত্রত্যাগ করতে মসজিদে যেতে বলার কথা ভাবল কী করে? আমার জানা মতে, রাজধানীর সব মসজিদেই ব্যাপক পানি-সংকট রয়েছে। প্রায়ই নামাজিদের বাসা থেকে ওজু-ইস্তেঞ্জা সেরে আসতে বলা হয়ে থাকে। সব মসজিদেই শুধু নামাজের সময় ওজু ও প্রস্রাবের জায়গাটি ভ্রাম্যমাণ নামাজিদের জন্য খুলে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সকলের জন্য মসজিদের পানি, ওজু, প্রস্রাব ইত্যাদির সুবিধা উন্মুক্ত রাখা সম্ভব নয়। মসজিদ তালাবদ্ধ না রাখলে ছিঁচকে চোর, মাদকাসক্ত, বখাটে কিংবা নাস্তিক-মুরতাদরা এসে মসজিদের ঘড়ি, ফ্যান, জুতা, মাইক ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় মানুষের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে তাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে মসজিদ দেখিয়ে দেয়া কতটুকু সুস্থ চিন্তাপ্রসূত এবং এর পেছনে কোন ধর্মবিদ্বেষী চক্রের হাত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। এতদিন আমরা মসজিদকে ইবাদতের পবিত্র স্থান বলে জানতাম। আর মসজিদ বাস্তবেও তাই। আল্লাহর ঘর মসজিদকে নিজেদের সব পুণ্যকর্মের ঠিকানা বলে মানুষ গণ্য করলেও সরকার এখন একে পাবলিক টয়লেটের সমমান দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দেখে মনে খুব কষ্ট পেলাম। অবিলম্বে এ হীন চিন্তা পরিত্যাগ করে, সংশ্লিষ্ট সকলকে খাস দিলে তওবা করার অনুরোধ জানাই। সীমালঙ্ঘন আল্লাহ কখনোই পছন্দ করেন না। একজন মুসলিম হিসেবে আমি রাজধানীর সকল মুসলমান ভাই-বোনকে এ বিষয়ে প্রতিবাদী হতে বলব। মসজিদের ইমাম, খতিব ও আলেমগণের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে, তারা যেন বিষয়টির ভয়াবহতা নামাজিদের সামনে তুলে ধরেন। আরবি ভাষা, মসজিদ ও ইসলামী মূল্যবোধকে নিয়ে এ ধরনের তামাশা মুখ বুজে মেনে নিলে আল্লাহ আমাদের কাউকেই ক্ষমা করবেন না। দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন এমন কা- নীরবে চলতে দিলে আমাদের ঈমান, আমল, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদা নিয়ে এদেশে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুন নাহার রুবি ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ও সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের মৌলিক অধিকারটুকু নিশ্চিত করার চেয়ে বাজে চিন্তা বেশি করছে বলে মনে হয়। পুরুষ পথচারীদের বলে দিয়েছে, প্রস্রাব করতে চাইলে মসজিদে যান। মহিলাদের তারা কোথায় যেতে বলবে? পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা না করে পথের পাশের নোংরা দেয়ালে ও অরক্ষিত জায়গায় কোরআনের অক্ষর লাগিয়ে কি মানুষকে ঠেকানো যাবে? বিপদে পড়লে মানুষ তো এদেশে স্কুল, হাসপাতাল, কবরস্থান ও মসজিদের পাশেও প্রস্রাব করে। দু’দিন পর আরবী লেখার উপরও যে তারা প্রস্রাব করবেনা এর নিশ্চয়তা কী? আমি এ ধরনের স্থূূলচিন্তার নিন্দা জানাই। মসজিদ ও আরবীভাষার এমন অবমাননা যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয় সরকারের নিকট দেশের সকল মানুষের মত আমারও এটিই দাবি।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত