সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র নেইঃ শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সময়েরদুটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হলো জঙ্গিবাদ ও সহিংসচরমপন্থা। মানবতার স্বার্থে বিশ্ব থেকে সংঘাত দূরকরে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দরপ্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এইচ্যালেঞ্জগুলো কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে আবদ্ধ নাথেকে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনিবলেন, কোনো দেশই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ নয়।কোনো ব্যক্তি এদের লক্ষ্যের বাইরে নয়। আমেরিকাথেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে এশিয়ায়সন্ত্রাসীরা অগণিত নিরীহ মানুষকে অহরহ হত্যাকরছে। আমরা মনে করি, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম,বর্ণ বা গোত্র নেই। এদের সমূলে মূলোত্পাটন করারসংকল্পে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।একইসঙ্গে এদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী,পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবংপ্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নিতেহবে। সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের অর্থ, অস্ত্রশস্ত্রেরযোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক ও বৈষয়িকসমর্থন না দেওয়ার জন্য তিনি বিশ্ব সমপ্রদায়েরপ্রতি আহ্বান জানান।বুধবার বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেজাতিসংঘের সদর দফতরে জাতিসংঘের সাধারণপরিষদের ৭১তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণেপ্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দেরউদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক মানবতার’ জন্যকাজ করার উদ্দেশ্যে আমরা সকলে এখানে সমবেতহয়েছি। মতের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আসুন ন্যূনতমবিষয়ে সকলে একমত হয়ে অভিন্ন অবস্থানে উপনীতহই। এটা করার জন্য জাতিসংঘ আমাদের একটি অনন্যপ্লাটফর্ম উপহার দিয়েছে। আসুন জাতিসংঘকেটেকসই ও প্রাসঙ্গিক একটি সংস্থা তৈরিতে আমরানতুন করে শপথ গ্রহণ করি।প্রধানমন্ত্রী ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুরএকটি ভাষণের অংশ তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এই মহান সাধারণ পরিষদেবলেছিলেন, ‘শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণআনুগত্য, তা এই উপলদ্ধি থেকে জন্মেছে যে,একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য,রোগ-শোক, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধেসংগ্রাম করতে আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগকরতে সক্ষম হবো।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ১৯ মিনিটেরভাষণে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন,বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সন্ত্রাস ওজঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, বিশ্বশান্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান,ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নেতাঁর সরকারের বাস্তবায়িত চিত্র তুলে ধরেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটিঅসামপ্রদায়িক দেশ। গত পহেলা জুলাই আমরা একঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। ঢাকার একটিরেস্তোরাঁয় কিছু দেশীয় উগ্রপন্থি সন্ত্রাসী ২০ জননিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এ সময় ১৩ জন জিম্মিকেআমরা উদ্ধার করতে সমর্থ হই। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাবাংলাদেশের জনগণের মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টিকরেছে। তিনি বলেন, আমরা এই নতুন সন্ত্রাসেরবিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদপ্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করতে এবং এর বিরুদ্ধেঅবস্থান নিতে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতেনিয়েছি। সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে অভূতপূর্বসাড়া পাচ্ছি।শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে আমরা একটিউচ্চাভিলাষী উন্নয়ন এজেন্ডা-টেকসই উন্নয়নলক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করেছি। এই এজেন্ডাররাজনৈতিক অঙ্গীকারকে পশ্চাত্পদ দেশগুলোর জন্যএকটি পূর্ণাঙ্গ এবং অর্থবহ অবলম্বনে রূপান্তরিতকরা প্রয়োজন। এজন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতেপরিবর্তনশীল প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটিঅন্তর্ভুক্তিমূলক, শক্তিশালী, ডিজিটাল এবংজ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৬দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতুনির্মাণ করছে। একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণেরআলোচনা চলছে। তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রার কার্যক্রমশুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকা শহরে মেট্রোরেলেরনির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশবিশ্বের অন্যতম দেশ যেখানে সীমিত সম্পদেরসদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার দ্রুত হ্রাসপাচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, জীবনধারণের জন্যঅত্যাবশ্যকীয় পানি একটি সীমিত সম্পদ। অভিন্নপানি সম্পদের বিচক্ষণ ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিতকরা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। সকলকে নিরাপদও সুপেয় পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা প্রদানকরতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ ‘ব্লুইকোনমি’র সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সামুদ্রিকসমপদ সংরক্ষণ ও এর টেকসই ব্যবহারেরপ্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নারীরঅংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রায় অর্ধদশক পূর্বে নারী শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্নপদক্ষেপের ফল আমরা পেতে শুরু করেছি।বাংলাদেশের নারীরা এখন উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্যঅংশীদার। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশজাতিসংঘের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি ‘শান্তিরসংস্কৃতি’র বিস্তারের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাবে।শান্তি রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদেরঅবদান অব্যাহত থাকবে।
শেয়ার করুন